মালয়েশিয়া যেতে পারেননি ৩০ হাজার কর্মী; ৪৭ নিয়োগদাতার লাইসেন্স স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৪, ১০:১৩ AM

কর্মী-ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হলেও বিমানবন্দরে রাতভর টিকিটের অপেক্ষায় ছিলেন শত শত কর্মী। দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন তারা। বরাদ্দ ১০টিসহ ১২টি ফ্লাইটে কর্মী গেছে ১ হাজার ৮ শর বেশি। এদিকে হয়রানির অভিযোগে মালয়েশিয়ার ৪৭ নিয়োগদাতার লাইসেন্স স্থগিত করেছে দেশটির সরকার। এজেন্সিগুলোর প্রতারণার কারণে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী আটকে গেল এ যাত্রায়।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত ২১ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ২১ মের পর আর অনুমোদন দেওয়ার কথা না থাকলেও বিএমইটি বলছে, মন্ত্রণালয় আরও ১ হাজার ১১২ জন কর্মীকে দেশটিতে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে গেছেন ৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ জন কর্মী। সর্বশেষ গতকাল আরও ১ হাজার ৫০০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। সব মিলিয়ে ভিসা ও অনুমোদন পাওয়ার পরও ৩০ হাজারের বেশি কর্মী যেতে পারছেন না। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে বিমানের ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে একটি বিশেষ অতিরিক্ত ফ্লাইটে মোট ২৭১ জন যাত্রী পরিবহন করা হয়।

তারপরও এখন পর্যন্ত বিরাট সংখ্যার শ্রমিকের মালয়েশিয়া যাত্রা অনিশ্চিত। অথচ এদের বৈধ ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। এসব শ্রমিক কয়েকদিন ধরেই ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন এজেন্সির সামনে। নানাভাবে চেষ্টা করেও টিকিট মিলছে না।

হাজারো মালয়েশিয়াগামী কর্মী গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই ভিড় করেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তাদের অভিযোগ, টিকিট পাইয়ে দিতে তাদের কাছ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার পরও সারারাত বিমানবন্দরে টিকিটের অপেক্ষা করেছেন অনেকে।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন জানান, টিকিট দেওয়ার জন্য তাঁর কাছ থেকে আগে টাকা নেওয়ার পরও বৃহস্পতিবার রাতে আরও ৩০ হাজার টাকা নেয় এজেন্সির কর্মীরা। রাতে তিনি টিকিট পেলেও সকালে এয়ারপোর্টে পৌঁছে জানতে পারেন, টিকিট ক্যানসেল হয়ে গেছে।

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘সকালে এয়ারপোর্টে আসার পর এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা তাঁকে জানান তিনি যে এজেন্সির কাছে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনিসহ আরও দশ জনের মোট ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা তারা দেয়নি। এ কারণে তাদের দশ জনের টিকিট ক্যানসেল করা হয়েছে।’

এজেন্সির প্রতারণার শিকার কোনো কোনো কর্মী দুইবার টিকিট কিনলেও পাননি ফ্লাইট। শেষ সময়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্রের জটিলতায় ফ্লাইট আটকে গেছে অনেকের।

এক ভুক্তভোগী জানান, টিকিট নিয়ে এয়ারপোর্টে এলেও বিএমইটির জটিলতার কারণে তাঁর টিকিট দিয়ে যাত্রা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘প্রতারক এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের প্রতারণার কারণে মালয়েশিয়াগামী প্রায়া ৩০ হাজার কর্মীর যাত্রা আটকে গেল। তবে কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’

সংকট সমাধান নিয়ে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রোগ্রাম পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় যে ফাঁক ফোকর রয়ে গেছে, সেটি পূরণ করা যাচ্ছে না। এ সুযোগটা নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে কর্মীরা।