সংসার খরচ বাঁচানোর উপায়

দেশে টানা দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এতে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে, আর জীবনের প্রায় প্রতিটি খাতে বেড়েছে খরচের চাপ।
খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ–গ্যাস বিল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যয়ও পরিবারগুলোকে কঠিন অবস্থায় ফেলেছে। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার মাস শেষে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে, অনেককেই ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, একটু সচেতনতা, খরচে অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও কিছু অভ্যাস বদল করলে এই কঠিন সময়েও সংসারের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিচে এমন ১০টি উপায় দেওয়া হলো, যা অনুসরণ করলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়েও খরচ কমানো ও সঞ্চয়—দুটিই সম্ভব।
১. প্রয়োজন ও ইচ্ছার পার্থক্য বুঝুন
কেনাকাটার আগে ভাবুন—এটি সত্যিই প্রয়োজনীয়, নাকি শুধু ইচ্ছা। রেস্টুরেন্টে খাওয়া, অনলাইন শপিং বা নতুন পোশাক কেনা—এসবের খরচ কমালে বাজেট অনেকটাই হালকা হয়।
২. মাসের শুরুতেই বাজেট তৈরি করুন
বেতনের টাকা তিন ভাগে ভাগ করতে পারেন—৬০% প্রয়োজনীয় খরচ, ২০% ইচ্ছাপূরণ ও ২০% সঞ্চয়। আয় ও প্রয়োজন অনুযায়ী এই অনুপাত সামঞ্জস্য করা যেতে পারে।
৩. একসঙ্গে কিনুন
চাল, ডাল, তেল, চিনি বা সাবানের মতো নিত্যপণ্য বড় প্যাকেটে কিনলে ইউনিটপ্রতি দাম কম পড়ে। একসঙ্গে কেনায় খরচ কিছুটা কমে।
৪. বাজারের তালিকা তৈরি করুন
তালিকা ছাড়া বাজারে গেলে হঠাৎ কেনাকাটার প্রবণতা বাড়ে। প্রতিবার বাজারে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা তৈরি করুন এবং তালিকার বাইরে কেনার আগে ভালোভাবে ভাবুন।
৫. স্থানীয় ও মৌসুমি পণ্য বেছে নিন
মৌসুমি ফল, সবজি ও মাছ তুলনামূলক সস্তা এবং পুষ্টিকর। আমদানিনির্ভর বা মৌসুমের বাইরে পাওয়া পণ্যের দাম সাধারণত বেশি হয়।
৬. বিদ্যুৎ–গ্যাস ব্যবহারে সচেতন থাকুন
অপ্রয়োজনে ফ্যান, বাতি, টিভি বা ওয়াই–ফাই চালু রাখবেন না। শক্তি–সাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল ১০–১৫% পর্যন্ত কমানো সম্ভব। চুলা খোলা রেখে দেওয়া অভ্যাসও ব্যয় বাড়ায়।
৭. বাইরে খাওয়া কমান
রেস্তোরাঁয় খাওয়া অনেক ব্যয়বহুল। অফিস বা স্কুলে ঘরের টিফিন নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে মাসে কয়েক হাজার টাকা সাশ্রয় হতে পারে।
৮. ডিজিটাল খরচের হিসাব রাখুন
বিকাশ, নগদ বা কার্ডে খরচের হিসাব নিয়মিত দেখুন। সপ্তাহে একদিন ব্যয়ের তালিকা লিখে রাখলে অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করা সহজ হয়।
৯. নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস করুন
মাসে অল্প পরিমাণ হলেও সঞ্চয় করুন—৫০০ বা ১,০০০ টাকা দিয়েই শুরু করুন। সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ছোট বিনিয়োগে নিয়মিত রাখলে দীর্ঘমেয়াদে বড় সহায়তা মিলবে।
১০. সরকারি সেবা ব্যবহার করুন
সরকারি হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ট্রেন বা বাসযাত্রা—এসব ব্যবহারে খরচ অনেকটাই কমে। অনলাইন কোর্স বা সরকারি প্ল্যাটফর্মের সেবাও হতে পারে সাশ্রয়ের উপায়।