১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন ডা. কামরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৩ AM

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করলেন সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের (সিকেডি) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। এর মাধ্যমে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। ভাঙলেন নিজের রেকর্ড নিজেই।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে মাদারীপুর জেলার পূর্ব ছিলাপুর গ্রামের বাসিন্দা, দুই কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া ২৭ বছর বয়সী শহীদুলের কিডনি প্রতিস্থাপন করার মধ্য দিয়ে এই রেকর্ড গড়েন তিনি।

এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনে দীর্ঘ ১৪ বছর লাগলেও শেষ ২৬ মাসে ৫শ' কিডনি প্রতিস্থাপন করেন তিনি। এক যুগ ধরে ২ লাখের আশপাশেই ছিলো তার প্রতিষ্ঠিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয়। যদিও অন্য হাসপাতালে এই ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেশি।

জানা গেছে, বরেণ্য এই চিকিৎসক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ১৫শ' প্রতিস্থাপনের একটিতেও নেন নি ব্যক্তিগত পারিশ্রমিক। প্রতিস্থাপন পরবর্তী ফলোআপ ও পরীক্ষা নিরীক্ষাতেও রোগীর কাছে নেন না কোনো ফি। 

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা যে— আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই অর্জন আমার জন্য খুবই সম্মানের এবং গৌরবের।

স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কখনও শেষ হবে না এমনটা মন্তব্য করে আমৃত্যু এই কাজ করার জন্য সবার দোয়া চান বরেণ্য এই চিকিৎসক।

নিজের পারিশ্রমিক ছাড়া ১ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেশ বিদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এরপর দায়িত্ববোধ যেন আরও বেড়ে যায়। মাত্র ২৬ মাসে আরও ৫শ' কিডনি প্রতিস্থাপন করে নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙেন। কোভিডকালে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে প্রতিস্থাপন প্রায় বন্ধ হলেও তিনি ২৫০টি কিডনি প্রতিস্থাপন করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও মানুষের অসহায়ত্ব ঘুঁচাতে তিনি এখন সপ্তাহে ৫টি প্রতিস্থাপন করছেন। নিজ হাতে গড়া সিকেডি অ্যান্ড ইউোরোলজি হাসপাতালের রেকর্ড বলছে, প্রতিস্থাপনের পর ১ বছর কিডনি সচল থাকার হার ৯৪ শতাংশ। ৩ বছর পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ, ৫ বছর পর্যন্ত ৭২ শতাংশ এবং ১০ বছর পর্যন্ত কিডনি সচল বা সুস্থ থাকার হার ৫০ শতাংশ। তরুণদের কিডনি দানের হার বেশি হলে গ্রহীতারা আরও দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে পারত বলে মত অধ্যাপক কামরুল ইসলামের। 

সফল প্রতিস্থাপনের পরও ফলোআপ, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় খরচ চালাতে না পারায় অনেকে মৃত্যুর শিকার হন। সেদিক বিবেচনায় সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে প্রতিস্থাপন করা প্রতিটি রোগীর আমৃত্যু বিনামূল্যে ফলোআপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন কামরুল ইসলাম।

শুধু প্রতিস্থাপন নয়, উপযুক্ত ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন তৈরিতে অধ্যাপক কামরুল ইসলামের জুড়ি নেই বলে জানান ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপনের সাক্ষী একমাত্র সার্জন ডা. তপন।

জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছিলো অধ্যাপক কামরুল ইসলামের হাত ধরে। ৫০ এর অধিক প্রতিস্থাপন করা ইনস্টিটিউট এখন বিনামূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করছে। সিকেডিকে স্বাগত জানিয়ে সপ্তাহে একটির পরিবর্তে আরও বেশি কিডনি প্রতিস্থাপনের অঙ্গীকার ইনস্টিটিউটটির পরিচালকের।

এক হাতে দেশের এক তৃতীয়াংশ কিডনি প্রতিস্থাপনের পর এখন হাসপাতালের পরিসর বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়াতে আগামীতে ক্যাডাভারিক বা ব্রেইন ডেথ রোগীর শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা প্রতিস্থাপনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন এই মানবিক চিকিৎসক।