ইসরায়েলে নিষিদ্ধ হচ্ছে আল জাজিরার সম্প্রচার; আইন পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২২ PM

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজায় ভয়াবহ ও নৃশংসতম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। আর তখন থেকেই এসব হামলা ও ঘটনাপ্রবাহের লাইভ কাভারেজ করছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্য আল জাজিরা। এর ফলে ইসরায়েলে আল জাজিরা নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে অনেকেই। ইসরায়েলের মন্ত্রীসভায় আল জাজিরার নিষিদ্ধের অনুমোদনও দেওয়া হয়। এবার আল জাজিরাসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা সরকারকে দিয়ে একটি আইন অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের সংসদ।

আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ফিন্যানশিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া আল জাজিরার প্রতিবেদনেও অনুরূপ তথ্য জানানো হয়েছে।

আইনটি অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, তিনি আল জাজিরার স্থানীয় অফিস বন্ধ করার জন্য 'অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবেন'।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল সরকারের এমন পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় উপত্যকাটিতে বসবাসকৃত আল জাজিরার কর্মীরাই যুদ্ধের বেশিরভাগ সংবাদ সংগ্রহ করছেন। তাদের মাধ্যমেই অঞ্চলটিতে চলমান ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে ইসরায়েলের সংসদ নেসেট বিদেশি নেটওয়ার্কগুলিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছে। আর তাই সংসদ এই নেটওয়ার্কগুলোকে 'সাময়িকভাবে' নিষিদ্ধ করার অনুমতি দিয়ে বিলটি অনুমোদন করেছে।

এক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাটি আরোপ করা হলে আইন অনুযায়ী তা একবারে ৪৫ দিনের জন্য কার্যকর হবে। সরকার চাইলে পরবর্তীতে ঐ সময়সীমা বৃদ্ধি করতে পারেন। আইনটি জুলাই মাস পর্যন্ত কিংবা গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, "আল জাজিরাকে ইসরায়েলে আর সম্প্রচার করতে দেওয়া হবে না।" একইসাথে সংবাদমাধ্যমটিকে একটি 'সন্ত্রাসী চ্যানেল' হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আল জাজিরার বিরুদ্ধে 'ইসরায়েল বিরোধী' পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে সংবাদমাধ্যমটির বিরুদ্ধে তেল আবিবের সমালোচনা আরও তীব্র হয়েছে।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের দাবি, আল জাজিরার হামাসের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ তীব্রভাবে অস্বীকার করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

অন্যদিকে ইসরায়েল সরকারের এমন পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটির বিবৃতিতে বলা হয়, "নেতানিয়াহু  আল জাজিরা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর তার চলমান আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশ্বকে দেখানোর মতো কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি। তাই তিনি আল জাজিরা ও এর কর্মীদের অধিকারের বিরুদ্ধে নতুন করে মিথ্যা এবং অপবাদমূলক তথ্য উপস্থাপন করছে।"

বিবৃতিতে আল জাজিরা তার কর্মীদের এবং সারা বিশ্বে নেটওয়ার্ক প্রাঙ্গণের নিরাপত্তার হুমকির জন্য নেতানিয়াহুকে দায়ী করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর লজ্জাজনক পদ্ধতিতে প্ররোচনা এবং মিথ্যা অভিযোগের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

চ্যানেলটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের কর্মীদের গাজায় লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করেছে। এমনকি ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরা গাজার ব্যুরো চিফ ওয়ায়েল আল-দাহদুহের ছেলে হামজা আল-দাহদৌহসহ বহু সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। যদিও তেল আবিবের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।

আল জাজিরার সদর দপ্তর কাতারে অবস্থিত। দেশটির ইসরায়েল ও হামসের মধ্যকার চলমান দীর্ঘ ৬ মাসের যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে। 

এর আগে কাতারের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। এতে প্রায় ১০৫ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। 

ইসরায়েলের কাতারের সংবাদমাধ্যমটি বন্ধের প্রভাব যুদ্ধবিরতির আলোচনায় পড়বে কি-না, সেটি পরিষ্কার নয়। তবে এর আগেও তেল আবিবের পক্ষ থেকে লেবাননের সংবাদমাধ্যম 'আল মায়াদিন' নিষিদ্ধ করেছিল।

ইসরায়েলের প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ের বলেন, "এটি যদি সত্য হয়, তবে এই ধরনের পদক্ষেপ উদ্বেগজনক।"

গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১২০০ জনকে হত্যা করা হয়; জিম্মি করা হয় ২৫৩ জনকে। বর্তমানে প্রায় ১৩০ জন হামাসের কাছে জিম্মি অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। 

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরাইল সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে গাজায় ৩২,৮০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। আর আহত হয়েছেন প্রায় ৭৫ হাজার গাজাবাসী।

আল জাজিরা ১৯৯৬ সালে প্রথম চালু হয়েছিল। এর পর থেকেই সংবাদমাধ্যমটি মধ্যপ্রাচ্যের মিডিয়া গতিপথ অনেকটা পরিবর্তন করে দিয়েছিল।

একইসাথে অঞ্চলটির নানা দেশের সরকার ও শাসকদের সমালোচনাও করতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব, জর্ডান ও মিশরসহ নানা দেশগুলিতে এটি নিষিদ্ধ বা বন্ধ করা হয়েছে।