আগামী বিশ্বকাপ খেলবেন কিনা মেসি?

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্পোর্টস জার্নাল স্পোর্টস জার্নাল
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৯ AM

মনুমেন্টালের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে ছিল উৎসবের আবহ। সমর্থকদের উচ্ছ্বাস, পরিবারের আবেগঘন উপস্থিতি আর দুইটি দুর্দান্ত গোল—সবকিছু মিলিয়ে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার মাটিতে শেষ অফিসিয়াল কোয়ালিফায়ার যেন পরিণত হলো এক অনন্য স্মৃতিতে। ম্যাচ শেষে যখন বিদায়ী সুরে গাইছিল দর্শকরা, তখন মেসি ও তার ভক্তদের চোখের আর্দ্রতাই হয়ে উঠেছিল দিনের আসল গল্প।

৩-০ গোলের এই জয়ে দুইটি গোল করে মেসি নিজের হাতেই যেন এই অসাধারণ অধ্যায়ের শেষে মিশ্র আবেগ নিয়ে মেসি বলেন, ‘এভাবে শেষ করা—এটাই সবসময় আমার স্বপ্ন ছিল।‘

কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের মনে সবচেয়ে বেশি ঝড় তুলেছে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা সেই তিনটি সরল, অথচ গভীর শব্দ: ‘দেখা যাক’।

পরের বিশ্বকাপ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেসি বলেন, আমি খেলতে চাই—আমি মোটেও তা অস্বীকার করছি না—কিন্তু বয়সেরও তো একটা ব্যাপার আছে। আমি মনে করি না যে আবার খেলাটা সবচেয়ে যৌক্তিক হবে। তবুও আমি প্রতিদিন দেখি, কেমন অনুভব করছি। যদি ভালো লাগে, উপভোগ করি; যদি না লাগে, তাহলে থাকবো না। এটাই আমার নিয়ম। তাই এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি, ‘দেখা যাক’।

নিজের শরীরের প্রতি সচেতনতা প্রকাশ করে তিনি আরও যোগ করেন, ম্যাচ থেকে ম্যাচ, দিন থেকে দিন—আমি কেবল আমার শরীরের কথা শুনছি। পুরো সিজন শেষ করব, প্রিসিজন থাকবে, তখন ঠিক করব কেমন অনুভব করছি।

এই বাস্তববাদী সরলতা আর দায়িত্ববোধই তাকে ভক্তদের কাছে আরও বেশি আপন করে তুলেছে।

এছাড়াও মেসি নিশ্চিত করেছেন যে ইকুয়েডরের বিপক্ষে গুয়াকিলে তিনি পরের কোয়ালিফায়ারে খেলবেন না। এর মাধ্যমে তিনি যেন আর্জেন্টিনার মাটিতে তার আইকনিক ফুটবল জীবনের বিদায়ের চিহ্ন এঁকে দিলেন।

ফুটবল ইতিহাসে মেসি দীর্ঘকাল ধরে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং জাতীয় দলের নায়ক। ২০০৬ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল। এরপর ২০১৪ এবং ২০২২ সালের সেই অবিস্মরণীয় বিশ্বকাপ যাত্রা তাকে আজকের এই মঞ্চে এনে দাঁড় করিয়েছে।

এখন বয়স, ফিটনেস এবং পরিবারের মতো বাস্তব বিষয়গুলো নিয়ে তিনি নিজে সংযমিত রয়েছেন।

তবুও ভক্তরা ক্লান্ত বন্ধুর মতো তার ফুটবল জীবনের বিদায় চান, নাকি আরও একবার তাকে বিশ্বমঞ্চে দেখতে চান? সেই প্রশ্নের উত্তর তবে, ‘দেখা যাক’।

২০০৫ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হওয়া মেসি দুই দশকের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৯৩ ম্যাচ, করেছেন ১১২ গোল। জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন দুটি কোপা আমেরিকা, একটি বিশ্বকাপ এবং অলিম্পিকের স্বর্ণপদক। ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনার ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই কিংবদন্তির জন্য ম্যাচটিকে ঘিরে দেশজুড়ে আবেগের স্রোত বয়ে যাচ্ছে।

ম্যাচকে ঘিরে মেসি নিজেও আবেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই ম্যাচটা আমার জন্য খুব, খুব বিশেষ। কারণ এটা বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার মাটিতে আমার শেষ ম্যাচ। জানি না এরপর আর কোনো ম্যাচ খেলা হবে কি না। তাই এবার পরিবারের সবাই থাকবে গ্যালারিতে—স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোন। আমরা একসঙ্গে উপভোগ করব। এরপর কী হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।

কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেছেন, যত দিন মেসি খেলবেন, তত দিন তাকে উপভোগ করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, একসময় আর্জেন্টিনাকে মেসি ছাড়া খেলতে হবে, তবে সেই মুহূর্ত এখনো আসেনি।

ইতোমধ্যেই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। ১৬ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন অঞ্চলের বাছাইয়ে শীর্ষে রয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচ ১০ সেপ্টেম্বর ইকুয়েডরের মাঠে খেলবে তারা।