জনগণের আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানত রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিগ্রহণ করার ফলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে শুরু করেছে। বিগত সরকারের শাসনামলে সরকারের ওপর জনগণ তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল।
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনে রদবদল, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, জুলাই-অভ্যুত্থানের আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন, কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনাসহ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়কারী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘এ ধরনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের ফলে সরকার বিশ্বাস ও মতাদর্শ নির্বিশেষে দেশবাসীর আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।’
তিনি আরো বলেন, অতীতে কোনো সরকারের সাধারণ জনগণের এমন আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের রেকর্ড নেই। নুসরাত সরকারের দুটি প্রধান কাজের প্রশংসা করেছেন। এগুলো হলো- সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা বা ভুল সংশোধন করা এবং জনগণের মতামতকে যথেষ্ট মূল্য দেওয়া।
তিনি আরো বলেন, ‘আগের সরকার জনসাধারণ কি ভাবছে বা কি চায়, তা উপেক্ষা করতো। বরং জনগণ যদি কোন কিছুর পরিবর্তন বা উন্নয়নের দাবি করতো তখন তারা অত্যন্ত অযৌক্তিক বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহন করতো।’
তিনি বলেন, যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার গণমুখী ইস্যুগুলোর প্রতি সংবেদনশীল, তাই জনগণ বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ছাত্র সমন্বয়কারী, আন্দোলনকারী, উপদেষ্টা ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে ছুটে আসছে।
বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতিমা বলেন, গণতন্ত্র কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য সরকারের প্রতি নাগরিকের আস্থার প্রয়োজন। কিন্তু বিগত শাসনামলের স্বৈরাচারী দৃষ্ঠিভঙ্গির কারণে দেশ গত দেড় দশকে আস্থার সংকটের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রতি আস্থা রেখে জনগণ সরকারকে রক্ষা করে চলেছে, যা প্রকৃতপক্ষে বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণে সরকারের ভূমিকাকে শক্তিশালী করে চলেছে।’
উমামা বলেন, যেমন বন্যা বা খারাপ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সময়, আমরা দেখেছি কিভাবে মানুষ বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যদের বাঁচাতে জীবন উৎসর্গ করেছে, যান চলাচলের ব্যবস্থা করেছে, রাস্তা পরিষ্কার করেছে বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দলে দলে জড়ো হয়ে ঘুমহীন রাত কাটিয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকারের প্রতি নাগরিকদের আস্থার কারণে রেমিট্যান্সের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ অভিবাসী শ্রমিকরা এখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে বাড়িয়ে দিতে অবৈধ উপায়ের পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করছে।
উমামা সুষ্ঠু সেবা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য সরকারী সংস্থায় স্থিতিশীলতা ও সঠিক কাজের পরিবেশ পুনরুদ্ধার করতে সংস্কারের জন্য সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন।
ইডেন মহিলা কলেজের আন্দোলনের সমন্বয়ক শাহিনুর সুমি বলেন, ‘সরকারের কাছে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি। কারণ সাধারণ মানুষের জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তাই সরকারের উচিত গণমুখী ইস্যুতে বেশি নজর দেওয়া।’
সুমি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেন।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী নাজিফা জান্নাত বলেছেন, বন্যা, জননিরাপত্তা ও মূল্যবৃদ্ধিসহ কিছু সংকটের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের তাৎক্ষণিক ও সফল সাড়াদান জনগণের আস্থা অর্জনে সহায়তা করেছে।
নাজিফা বলেন, ‘দেশের প্রতিটি প্রান্তে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা উচিত এবং বাজারের সব সিন্ডিকেটকে নির্মূল করার জন্য অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
সরকার যদি নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, জনগণের আস্থা হারাবে উল্লেখ করে নাজিফা বলেন, জনগণের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি না দেখলে, তারা সরকারের প্রতি তাদের ধৈর্য হারাবে।’
সূত্র : বাসস