বনশ্রীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাত জন শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১৮ AM

রাজধানী ঢাকার বনশ্রীতে গত রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ লুটের ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ানকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

এ ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর রামপুরা থানায় অজ্ঞাতনামা ছয়-সাত জনকে আসামি করে আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মামলাটি করেন। পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এ ঘটনায় জড়িত সাত জনকে শনাক্ত করেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এদিকে এই ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানীর বনশ্রী এলাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।

গত রবিবার রাতে রাজধানীর বনশ্রীর ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে নিজ বাসার সামনেই জুয়েলারি ব্যবসায়ীর পথরোধ করে এলোপাথাড়ি গুলি করে ও কুপিয়ে ১৪০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় একটি বাড়ির ওপর থেকে মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, একটি বাসার সামনে ভুক্তভোগীর সঙ্গে তিন জন ব্যক্তি ধস্তাধস্তি করছে। আর তিনটি মোটরসাইকেলে আরও চার জন তাদেরকে ঘিরে রয়েছে। ভুক্তভোগী চিৎকার করছেন। এরই মধ্যে দুর্বৃত্তদের একজন ঐ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে ভুক্তভোগী গুলিবিদ্ধ হয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তিনটি মোটরসাইকেলে করে আসা সাত জন পালিয়ে যায়। এর আগে দুর্বৃত্তদের এক জনকে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে দেখা যায়। এই হামলার সময় চিৎকার করে সাহায্য চান ঐ ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও সন্তানরা। কিন্তু গেটে তালা ছিল ঐ সময়।

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে এই মামলা করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের বাসার দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছে। তাকে আটক করা হয়নি। তিনি বলেন, ঐ বাসার নিয়ম অনুযায়ী রাত ১১টায় গেট বন্ধ হওয়ার কথা। কেন এদিন সাড়ে ১০টায় গেট বন্ধ হলো, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওসি আরও জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের সাত জনকে শনাক্ত করে গ্রেফতারের অভিযান চলছে।

এদিকে গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী আনোয়ার গতকাল সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, রাতে দোকান বন্ধ করে মোটরসাইকেল চালিয়ে আমার বাসার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেলটি দাঁড় করাই। আমি দারোয়ানকে গেট খুলতে বলি। এর মধ্যে তিনটি মোটরসাইকেল এসে আমাকে ঘিরে ফেলে। এটা দেখে দারোয়ানের স্ত্রী গেট লাগিয়ে দেয়। তখনো তারা আমাকে গুলি বা কুপিয়ে আহত করেনি। আমি দারোয়ানকে বারবার গেট খুলতে বলি কিন্তু সে গেট খুলে না। এই সময় আপনারা তো ভিডিওতে দেখছেন তারা আমার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছিল। পরে আমাকে কুপিয়ে এবং গুলি করে আমার ব্যাগে থাকা ১৪০ ভরির মতো স্বর্ণ ও নগদ ১ লাখ টাকা নিয়ে যায়। দারোয়ানের স্ত্রী যদি পকেট গেটটাও খুলে দিত তাহলে আমি কিন্তু বাসার ভেতরে ঢুকে যেতে পারতাম। তাহলে ছিনতাইকারীরা কিছুই নিতে পারত না।  তিনি আরও বলেন, ব্যাগ দিতে না চাওয়ায় তারা আমাকে কুপিয়ে জখম ও তিনটি গুলি করে। দুটি গুলি লাগে দুই পায়ে ও অন্যটি লাগে গোপনাঙ্গে।  এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরও বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাকে নানাভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা নেয়।

এদিকে, ঐ বাসার দারোয়ান পিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ওই সময় আনোয়ার হোসেনের চিৎকার শুনে আমরা সবাই বের হওয়ার চেষ্টা করি। পরে গুলির শব্দ পাওয়ায় কেউ আর সাহস করেনি। মোটরসাইকেল চলে যাওয়ার পর রাস্তায় নেমে সবাই তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই।’

এদিকে এই ঘটনায় গতকাল বিক্ষোভে উত্তাল হয় বনশ্রী এলাকা। সড়ক অবরোধ করে এলাকার ব্যবসায়ীরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। তাদের বিক্ষোভের সময় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এলে তাদের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানান এলাকাবাসী। পরে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাসে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।