নতুন জিআই স্বীকৃতি পাচ্ছে আরো ২১ পণ্য
দেশে আরো ২১টি পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে সনদ পাচ্ছে। যেগুলোর পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। আর এখন পর্যন্ত মোট আবেদন জমা হয়েছে ৯৭টি পণ্যের। যার মধ্যে ৩২টি পণ্য এরই মধ্যে জিআই সনদ দেওয়া হয়েছে।
জিআই সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি), যা জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার (ডাব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে সনদ দেয়।
ডিপিডিটির সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার পর্যন্ত মোট আবেদন পড়েছে ৯৭টি পণ্যের। এর মধ্যে ৩২টি পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে। আরো ৩২টি পণ্যের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
১১টি পণ্যের জিআই জার্নাল প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে রয়েছে। ১০টি পণ্যের জার্নাল অনুমতি দিয়েছে ডিপিডিটি, যেগুলো বিজি প্রেসে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই ২১টি পণ্যের বিরুদ্ধে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারবে। তখন আবার আবেদনকারী এবং অভিযোগকারীর তথ্য-প্রমাণ যাচাই করা হয়।
এগুলোর সনদ দেওয়া বাতিলও হয়ে যেতে পারে। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে জার্নাল প্রকাশের আগ পর্যন্ত। জার্নাল প্রকাশিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তা জমা দেওয়া যাবে। অন্যদিকে ৩২টি পণ্যের জিআই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত ১২টি পণ্যের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
ডিপিডিটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জিআই সনদের জন্য যে কেউ আবেদন করতে পারেন। এমনকি তথ্য দিয়েও সহায়তা করতে পারেন। যত পণ্য জিআই সনদ পাবে ততই দেশের ব্যবসায়ীরা উপকার পাবেন। বিদেশে জিআই পণ্যের বাড়তি মর্যাদা ও বেশি দাম পাওয়া যায়। এতে ডলার উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।’
সনদ পাওয়া নিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যে কেউ জিআই সনদের জন্য তথ্য দিতে পারে। শুধু আমাদের মতো করে ফাইলের তথ্য সাজাতে হবে। যেসব আবেদন বাতিল হয়ে গেছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু আবেদনে পরিপূর্ণ তথ্য ছিল না। অনেকবার তাঁদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হলেও আবেদন করার পর সাড়া দেননি। আবার কিছু আবেদনের কোনো ভিত্তিই ছিল না। ফলে আন্তর্জাতিক নিয়ম ও দেশের আইন অনুযায়ী সেগুলোর আবেদন বাতিল করা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন করে ২০১৩ সালে। এর দুই বছর পর ২০১৫ সালে বিধিমালা প্রকাশ করা হয়। ওই বছর সর্বপ্রথম জামদানি শাড়ির জিআই আবেদন করা হয়। যার সনদ দেওয়া হয় ২০১৬ সালে। এরপর ২০১৭ সালে দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে জিআই সনদ দেওয়া হয় ইলিশ মাছকে। এখন গত ৯ বছরে সনদ দেওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২টিতে।
পণ্যে জিআই সনদ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সনদ পেলে ওই পণ্য ক্রেতারা খাঁটি বা আসল পণ্য মনে করেন। এতে দেশ ও দেশের বাইরে পণ্যটি বিক্রি ও রপ্তানিতে বেশি দাম পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ডিপিডিটির কর্মকর্তা আমিন মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো সনদ পায়। যার আলাদা কদর থাকে। ব্যবসায়ীরা দাম বেশি পাবেন দেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে। যারা জিআই সনদ পাওয়া পণ্য তৈরি করে তাদের এক ধরনের সুবিধা দেওয়ার মতো। যেমন আধুনিকতা ও মেশিনারিজের আড়ালে বগুড়ার দই হারিয়ে যেতে পারে।
টাঙ্গাইলের শাড়ি টেক্সটাইল মেশিনারিজের ভিড়ে হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু জিআই হিসেবে তৈরি করলে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। মানুষও কিনবে। তারা মনে করবে এটা আসল ও ঐতিহ্যবাহী পণ্য। মানুষও জিআই পণ্য বেশি দামে কিনতে চায়। ফলে এই সনদ উৎপাদকদের সুবিধা দেয়।