জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে
আজ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা, মহানগর ও উপজেলা, থানা, পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’র আয়োজন করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার যে মানুষের কল্যাণে কাজ করে, সেটা একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখন উপলব্ধি করেছে, সুফল পেয়েছে। জনগণের ভোটে কোনো একটি দল একটানা চারবার ক্ষমতায় আসা সহজ কাজ না। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের উন্নয়নটা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। প্রতিটা স্তরের মানুষ যাতে অবহেলিত না থাকে, সেই দিকে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পনা নিয়েছি, বাস্তবায়ন করেছি। ফলে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’
পঁচাত্তরে জাতির পিতার হত্যাকারী ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, তার জন্য বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু জনগণই আমাদের একমাত্র শক্তি ও ভরসার স্থল, আর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অগণিত নেতা-কর্মী, তাদের ত্যাগ, তিতিক্ষা, অবদানের ফলে আমরা গণতন্ত্র ফিরেয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দেশে জনগণ ও মানুষের সংগঠন হচ্ছে একমাত্র আওয়ামী লীগ। যে আওয়ামী লীগ জাতির পিতার আদর্শে বলীয়ান।’
দশম, একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন যাতে না হয়, তার জন্য চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বারবার সেটা মোকাবিলা করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছি। এবারের নির্বাচন নিয়েও বিরাট চক্রান্ত ছিল। চক্রান্তটা ছিল যেন নির্বাচনটা না হয়। অর্থাৎ নির্বাচিত সরকারের কারণে বাংলাদেশের মানুষের যে আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে, এটাই অনেকের সহ্য হয়নি। তাই এমন একটা চক্রান্ত শুরু করেছিল, যার ফলে বিএনপি নির্বাচনে আসে নাই। নির্বাচন বানচাল করার জন্য তাদের জ্বালাও-পোড়াও অগ্নি-সন্ত্রাস।’
জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণের সংগঠন, এটা তাদের মনে রাখতে হবে। এটা ভেসে আসেনি কিংবা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেলের পকেট থেকে এই সংগঠন বের হয়নি। এটা মাটি-মানুষের ভেতর থেকে সংগঠন বেড়ে উঠেছে। মানুষই এই সংগঠনের বড় শক্তি।’
নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারের আইন করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ইসিকে শক্তিশালী করতে প্রতিটি নির্বাচনের পরে বিভিন্ন সংস্কার করার কথা তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এই সাহস একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ জনগণের ওপর আস্থা-বিশ্বাস আছে।
দ্বাদশ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়—বলে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয়নি—তাদের সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে, কী কী ক্ষেত্র দেখে বলছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হয় নাই, এটা তাদের বলতে হবে। তারা সেটা বলে না, একইভাবে বলে যাচ্ছে অবাধ, নিরপেক্ষ হয় নাই। কিছু দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায় হতে এ ধরনের কথা বলা হয়। যে দেশই বলুক, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কীভাবে এবং কোথায় সমস্যা, তাদের বলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনো তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় খুনোখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালন করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত কথার মধ্যে আমাদের দেশটা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ অন্তত প্রতিপক্ষ থাকুক, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হোক, ভোটার আসবে, নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে, সেই অধিকারটুকু জনগণ পাক। সেইভাবে নির্বাচন করেছি বলেই আজকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। অনেকেই বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। এই কথাটা আমাদের সকল নেতা-কর্মীর মাথায় রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মন কষাকষি, নানা রকম কিছু হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে, এখন ভুলে যেতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে।