ঐতিহাসিক সাকরাইন উৎসবে মাতোয়ারা পুরান ঢাকার বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪০ PM
আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) পৌষ মাসের শেষ দিন এবং পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য সাকরাইন উৎসবের দিন। আজ সারাদিন ধরে আকাশে উড়ছিল রং-বেরঙের ঘুড়ি, আর সন্ধ্যার পর আকাশ হয়ে ওঠে আতশবাজির আলোয় রাঙানো। ফানুসের আলোর ঝলকানি যেন উৎসবের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে নানা বিধিনিষেধের কারণে চারশ বছরের ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব এবার কিছুটা ম্লান হয়ে পড়েছে।

পুরান ঢাকার আকাশে সন্ধ্যার পরই দেখা যায় আলোর রোশনাই। ভবনের ছাদে ছাদে আলো, ডিজে, আতশবাজি এবং বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে পালিত হয় উৎসব। আতশবাজির আলোকচ্ছটা রাতের আকাশকে আলোয় ভরে তোলে।

এটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে এবং বছরের অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় পুরান ঢাকার মানুষ এই দিনটির জন্য বিশেষভাবে অপেক্ষা করেন। প্রতিটি বাড়ির ছাদে চলে নানা ধরনের আয়োজন, যা উৎসবের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

মোঘল আমল থেকেই ঢাকায় এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। পৌষ-মাঘের সন্ধিক্ষণে খাজনা আদায়ের পর নবাবরা ঘুড়ি উৎসব এবং খাবারের আয়োজন করতেন।

নাটাই সুতোর খেলা সন্ধ্যায় আরও রঙিন হয়ে ওঠে, যেখানে প্রতিটি ছাদে চলে প্রতিযোগিতা। তরুণরা দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে আগুনের ঝলকানি তৈরি করে সাকরাইনের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে। ঘুড়ির বদলে ফানুসও রাতে আকাশে দখল করে নেয়।

আতশবাজি, আলোকসজ্জা এবং উৎসবের বহুমাত্রিক আয়োজনের মধ্যে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা আত্মীয়দের সঙ্গে একত্রিত হয়ে নাচ-গান করে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

সাকরাইন উৎসবের উৎপত্তি
"সাকরাইন" শব্দটি সংস্কৃত শব্দ "সংক্রাণ" থেকে এসেছে, যার আভিধানিক অর্থ হলো বিশেষ মুহূর্ত। এই সংক্রান্তি উপলক্ষে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে উৎসব পালিত হয়, তবে প্রতিটি দেশে এটি ভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলায় এটি পৌষ সংক্রান্তি এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪০ সালের এই দিনে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে পুরান ঢাকার মানুষ এই দিনটিকে উৎসব হিসেবে পালন করে আসছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একত্রে এই আনন্দের মুহূর্ত উপভোগ করেন।