সপ্তাহে কর্মদিবস ৪ দিন করে যে সুফল পেয়েছে আইসল্যান্ড
ইউরোপের দেশ আইসল্যান্ড। সপ্তাহে চার দিন কর্মদিবস কার্যকর করে তুলনামূলক সুফল পেয়েছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশ। দেশটির অর্থনীতি এখন ইউরোপের অধিকাংশ দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
গত শুক্রবার প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালে মধ্যে আইসল্যান্ডের ৫১ শতাংশ কর্মী কম কর্মঘণ্টার সুবিধা নিয়েছেন। বর্তমানে কম কর্মঘণ্টার সুবিধা নেওয়া কর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে।
আইসল্যান্ডের কর্মীদের কম কর্মদিবস নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ব্রিটেনের অটোনমি ইনস্টিটিউট এবং আইসল্যান্ডের অ্যাসোসিয়েশন ফর সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আলডা)। তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, গত বছর আইসল্যান্ডের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইউরোপের অধিকাংশ দেশের চেয়ে দ্রুত ছিল এবং দেশটির বেকারত্বের হারও ইউরোপের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।
আলডার গবেষক ডি. হ্যারাল্ডসন বলেন, ‘আমাদের এই গবেষণায় আইসল্যান্ডের কর্মজীবীদের কম কর্মঘণ্টার সফলতার চিত্র উঠে এসেছে। আইসল্যান্ডের অর্ধেকের বেশি কর্মী কম কর্মঘণ্টার সুবিধা নিয়েছে এবং এটি অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। দেশটির অর্থনীতি বিভিন্ন সূচকে শক্তিশালী হয়েছে।’
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দুটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচিতে (ট্রায়াল) আইসল্যান্ডের সরকারি কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৩৬ ঘণ্টা কাজ করেছেন এবং তাদের বেতন অপরিবর্তিত ছিল। এর আগে অধিকাংশ কর্মী প্রায় ৪০ ঘণ্টা কাজ করতেন।
এই পরীক্ষামূলক কর্মসূচিতে প্রায় আড়াই হাজার কর্মী (আইসল্যান্ডের মোট কর্মীর ১ শতাংশ) অংশ নিয়েছিলেন। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল কর্মজীবনের ভারসাম্য বজায় রেখে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো।
গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ কর্মস্থলে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। কোথায় কোথায় উৎপাদনশীলতা অপরিবর্তিত থেকেছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা কমেনি। বরং কর্মীদের সুস্থতা ও কর্মজীবনের ভারসাম্যে ‘নাটকীয়’ উন্নতি হয়েছে।
এই গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে আইসল্যান্ডের শ্রমিক ইউনিয়নগুলো দেশজুড়ে তাদের সদস্যদের জন্য কর্মঘণ্টা কমানোর চুক্তি করেছে।
বেড়েছে অর্থনৈতিক গতিশীলতা
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে আইসল্যান্ডের অর্থনীতি ৩ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ মাল্টার পরেই এখন আইসল্যান্ডের অবস্থান। এই প্রবৃদ্ধি ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ২ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি।
তবে পর্যটন খাতে ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় ২০২৪ সালে আইসল্যান্ডের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি খানিকটা কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চার দিনের কর্মসপ্তাহের নানা পরীক্ষা চলছে, যার মধ্যে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং আয়ারল্যান্ডের ৩৩টি প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত একটি সফল পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত।