ধূমপান সত্যিই কি স্ট্রেস কমায়? যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ধূমপানে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী অনেক। যারা ধূমপান করেন তাদের অনেকের আবার কিছু যুক্তিও থাকা। যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তারা বলেন, স্ট্রেস কাটানোর জন্যে এই নেশা করেন তারা। অনেকে বিশ্বাস করে যে, সিগারেট একটি স্ট্রেস রিলিভার। অনেকেই প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কিছুক্ষণের জন্য রিলিভ পেতে ধূমপান করেন, আবার অনেকেই অফিসের চাপ কমাতে ধূমপান করেন। আবার অফিসে ঢোকার সময়, খাবার পর একটা সিগারেট না হলে ঠিক জমে না। কিন্তু বাস্তবে, মগজে ধোঁয়া দিয়ে মগজের কতটা ক্ষতি হচ্ছে তা পরিষ্কার জানলে অনেক ধূমপায়ীই বোধহয় দ্বিতীয়বার ভাববেন।
২০টি দেশে অন্তত ৪২টি পৃথক সমীক্ষার রিপোর্ট একত্রিত করে দেখা গেছে, যারা ধূমপান করেন তাদের মধ্যে স্কিৎজোফেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা যারা ধূমপান করেন না তাদের থেকে অন্তত পাঁচগুণ বেশি।
অ্যাটেনশান ডেফিশিয়েট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার বা এইএইচডি মতো রোগ যেখানে রোগীর মনোযোগের সমস্যা হয়, তার পিছনেও হাত রয়েছে সিগারেটের। দেখা যাচ্ছে, শতকরা ৬০-৮০ ভাগ এডিএইচডি রোগীর ক্ষেত্রেই জেনেটিক কার্যকারণ থাকে। কিন্তু সিগারেট এখানে কোমরবিডিটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
দেখা যাচ্ছে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের মতো রোগের ক্ষেত্রেও নিকোটিন আসক্ত মানুষ অনেক বেশি পরিমাণে এই রোগের শিকার হন। দেশভেদে দেখা যাচ্ছে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের শিকার রোগীদের মধ্যে ৩০-৭০ শতাংশই ধূমপায়ী।
ডিপ্রেশনের সঙ্গেও সিগারেটের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে মার্কিন মুলুকে অবসাদে ভোগা ৩০ শতাংশ মানুষই ধূমপায়ী। এছাড়া অবসাদে ভুগছেন এমন মানুষের ৬০ শতাংশের মধ্যেই অতীতে ধূমপানের অভ্যেস ছিল।
স্ট্রেস নিকোটিনের সঙ্গে সম্পর্কিত
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, যারা ধূমপান করেন না তাদের সাধারণত ধূমপায়ীদের তুলনায় মানসিক চাপ কম থাকে। তবে, অনেকে মনে করেন যে, সিগারেট খেলেই স্বস্তিবোধ করবে। এর কারণ হলো, শরীরে নিকোটিনের মাত্রা সিগারেট খাওয়ার পর শরীরের স্তরে ফিরে আসে। ধূমপানের সময় মনে হয়, ডোপামিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি সিগারেট প্রয়োজন। ধূমপানের সময় মনে হতে পারে, এটি আপনাকে শিথিল করতে সাহায্য করছে। কিন্তু বাস্তবে, এটি আপনার শরীরের উপর শারীরিক চাপ বাড়াচ্ছে।
ধূমপানে মানসিক চাপ কম হয় না, ত্যাগ করলে কমে
ধূমপান ত্যাগ করার ৩ মাস পরে, ডোপামিন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ধূমপান ত্যাগ করলে মানসিক চাপ কমতে পারে। নিকোটিনের আসক্তি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং ধূমপানের সময় মেজাজ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু সিগারেটের অভাবে মেজাজ খারাপ হয়। সিগারেটের চাপ-হ্রাসকারী প্রভাব শুধুমাত্র নিকোটিনের অভাবের কারণে সৃষ্ট স্ট্রেস এবং বিরক্তি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত অফিসের পরিবেশের বাইরে অথবা আবদ্ধ পরিবেশের বাইরে গিয়ে, মুক্ত বাতাসে হাঁটাহাঁটি করলে নতুন শক্তি অনুভব হয়। কিন্তু নিকোটিনে আসক্ত ব্যক্তিরা মনে করেন যে, সিগারেটেই সতেজতা মিলবে। যদিও নিকোটিন গ্রহণের ফলে কিছু সময়ের জন্য এই ধরনের অনুভূতি হয়। কিন্তু আসলে এই আসক্তি থেকে বহুগুণ বেশি শারীরিক ক্ষতি করে।