বার্ধক্য কোনো কোনো মানুষকে পরাভূত করতে পারে না
বয়ঃসন্ধিকাল সব মানুষের জীবনে প্রায় একই সময়ে এলেও এর পরের জীবন থেকে পার্থক্য শুরু হয়। যেমন কারও কারও ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়স থেকে বার্ধক্য শুরু হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে শরীরে বার্ধক্যের প্রক্রিয়া শুরু হতে আরও বেশি সময় নেয়।
বয়স হওয়া মানে শরীরে ক্লান্তি আসে, চলার শক্তি কমে যায়, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। তবে সবার ক্ষেত্রে একই সময়ে এসব ঘটে না। কেউ আগে থেকেই ক্লান্ত হয়ে যায়। অনেক সময় বয়স্ক ব্যক্তিও অন্য কোনো তরুণের মতো সবল থাকেন। তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যেতে পারেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর কারণ শরীরে অঙ্গের বয়স বেড়ে যাওয়া।
মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কোষে জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত যা মানবদেহকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রোটিন অনুসন্ধান করে এমন একটি নতুন অধ্যয়ন হয়েছে, যা পরামর্শ দেয় যে এই পরিবর্তনগুলো অভিন্ন নয়।
বয়স বাড়ে কেন
কেউ জানে না কীভাবে এবং কেন মানুষ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়। কিছু তত্ত্ব দাবি করে যে, বার্ধক্য দীর্ঘ সময় ধরে অতিবেগুনি রশ্মির প্রতিক্রিয়া, শরীরের ওপর নানা ধরেন বাহ্যিক ক্রিয়া এবং বিপাক বা বিপাকের উপজাতের কারণে ঘটে। অন্যান্য কিছু তত্ত্ব আছে, যারা বার্ধক্যকে জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি পূর্বনির্ধারিত প্রক্রিয়া হিসেবে দেখে।
এব্যাপারে সাহিত্যে নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘বার্ধক্য কোনো কোনো মানুষকে পরাভূত করিয়া পদানত করে, আবার কোনো কোনো মানুষের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করিয়া তাহার সঙ্গে বন্ধুর মতো বাস করে। ইঁহার শরীরমনে বার্ধক্য তাহার জয়পতাকা তুলিতে পারে নাই। আশ্চর্য ইঁহার নবীনতা। আমার বারবার মনে হইতে লাগিল, বৃদ্ধের মধ্যে যখন যৌবনকে দেখা যায় তখনই তাহাকে সকলের চেয়ে ভালো করিয়া দেখা যায়।
কেননা, সেই যৌবনই সত্যকার জিনিস; তাহা শরীরের রক্তমাংসের সহিত জীর্ণ হইতে জানে না; তাহা রোগতাপকে আপনার জোরেই উপেক্ষা করিতে পারে। তাঁহার দেহের আয়তন বিপুল, তাঁহার মুখশ্রী সুন্দর;
কেবল তাঁহার পীড়িত পায়ের দিকে তাকাইয়া মনে হইল, অর্জুন যখন দ্রোণাচার্যের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তখন প্রণামনিবেদনের স্বরূপ প্রথম তীর তাঁহার পায়ের তলায় ফেলিয়াছিলেন, তেমনি বার্ধক্য তাহার যুদ্ধ-আরম্ভের প্রথম তীরটা ইঁহার পায়ের কাছে নিক্ষেপ করিয়াছে।’