ইবিতে নিয়ম ভেঙে ছাত্রদল নেতাকে ভর্তি, তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৩ AM

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষাজীবন শেষ না করা শিক্ষার্থীদের পুনঃভর্তির সুযোগ দেওয়াকে ঘিরে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে একাডেমিক অর্ডিন্যান্সে নির্ধারিত নিয়ম লঙ্ঘন করে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজকে পরিসংখ্যান বিভাগে নিয়মিত মাস্টার্স প্রোগ্রামে পুনঃভর্তি নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যারা পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি, তাদের সহায়তা করতেই এই বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে আনোয়ার পারভেজকে নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং করছেন এবং ছাত্রত্ব বজায় রাখতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পুনঃভর্তি হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অর্ডিন্যান্সের পুনঃ ভর্তি ধারা অনুযায়ী পর পর দুই বছর কোর্স সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন এমন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মাস্টার্সে পুনঃ ভর্তির সুযোগ নেই। তবে অর্ডিন্যান্সের এই নিয়মের বাইরে গিয়ে সম্প্রতি ছয়জনকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত মাস্টার্সে পুনঃ ভর্তি নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি এমন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে প্রশাসন। অর্ডিন্যান্সের বাইরে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাজনৈতিক বিবেচনার কথা বললেও ভর্তি হওয়া সবাই রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে পুনঃ ভর্তির আবেদন করেননি। এদের মধ্যে আনোয়ার পারভেজ পারিবারিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করেন বলে জানা গেছে। এমনকি আবেদনে তার দেওয়া পারিবারিক কারণটিও মিথ্যা বলে অভিযোগ উঠেছে।

একাডেমিক শাখা ও বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার পারভেজ পরিসংখ্যান বিভাগের অনার্স ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। অনার্স শেষে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে একই বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। তবে তখন কোর্স সম্পন্ন করতে পারেননি। ফলে ৫ আগস্টের পর পারিবারিক সমস্যার কারণে কোর্স সম্পন্ন করতে পারেননি উল্লেখ করে বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রারের কাছে পুনঃ ভর্তির আবেদন করেন।

বিভাগের পুনঃ ভর্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটির ১৯৩তম সভায় তাকে বিশেষ বিবেচনায় পুনঃ ভর্তির সুপারিশ করা হয়। পরে সেটি একাডেমিক শাখায় গেলে একাডেমিক অর্ডিন্যান্সের পুনঃ ভর্তি ধারা অনুযায়ী এমএসসি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পুনঃ ভর্তির সুযোগ নেই উল্লেখ করে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য উপাচার্য বরাবর প্রেরণ করে। এতে প্রথমে উপাচার্য পুনঃ ভর্তির অনুমোদন দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স বহির্ভূত হওয়ায় পরে তা স্থগিত করে দেন।

পরবর্তীতে পারভেজসহ অন্য পাঁচ ছাত্রদল নেতার পুনঃ ভর্তির বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উঠলে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়টি যাচাই বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ভর্তির জন্য সুপারিশ করা হলে সিন্ডিকেটে তা অনুমোদন হয়। 

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ভর্তি হওয়া অন্য ছাত্রদল নেতাদের প্রকৃত রাজনৈতিক সমস্যা থাকলেও আনোয়ার পারভেজের কোন পারিবারিক ও রাজনৈতিক সমস্যা ছিল না। আওয়ামী আমলে তাকে ক্যাম্পাসে অবাধে চলাচল, আড্ডাসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড করতে দেখা যেত। বিভিন্ন সময় আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। এমনকি ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলেই থাকতেন।  ২০১৭ সালের পর হলে থাকার সুযোগ না পেলেও তাকে ক্যাম্পাসে চলাফেরা, আড্ডা দেওয়াসহ আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে দেখা গেছে। 

ক্যাম্পাসে অবস্থান করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত হলে থাকতে পেরেছিলাম। যখন হলে ছিলাম তখন অনার্সও শেষ হয়নি। মাস্টার্স তো অনেক পরের কথা। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে ছিলাম, খেলাধুলা করা আর নিয়মিত ক্লাস করা এক জিনিস না। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলাম, কিন্তু কোনো ক্লাস করতে পারি নাই। যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা বলেন, আমরা আমাদের বিভাগের স্যারদের সহায়তায় ফ্যাসিবাদের আমলে শিক্ষাজীবন শেষ করেছি। শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়কও সেই সময়টাতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। এমনকি তিনি নিয়মিত অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সও শেষ করেছেন। সে জায়গা থেকে আমরা পারলে সে কেন পারল না? সে মূলত কমিটিতে আসার জন্য ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতেই তখন মাস্টার্স শেষ করেনি।

এ বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ককে মুঠোফোনে ফোন দিলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

যাচাই বাছাই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নজিবুল হক বলেন, এটা মূলত একাডেমিক কাউন্সিলেই পাস হয়ে ছিল। আমাদের শুধু যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। একাডেমিক কাউন্সিলের আলোকেই আমরা সুপারিশ করেছি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক বলেন, রাজনৈতেক প্রতিবন্ধকতার কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেনি শুধু এমন বিষয়গুলোতে বিবেচনা করা হয়েছে। এছাড়া অর্ডিন্যান্স বহির্ভূত অন্য কোন বিষয় কনসিডার করা হয়নি। পারিবারিক বা অন্য কারণে পড়ালেখা শেষ করতে পারেনি এমন কারো ভর্তির সুযোগ নেই। আমি শুধু চিঠিটা ইস্যু করেছি। এছাড়া আমার আর কিছু জানা নেই।