শিক্ষাবিদ যতীন সরকার আর নেই

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার (৯০) মারা গেছেন। বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অধ্যাপক যতীন সরকার দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, অনেকদিন ধরে অধ্যাপক যতীন সরকার কিডনি সমস্যা, নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। গত ৮ আগস্ট তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর থেকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ বিকেল পৌনে ৩টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে আসেন অসংখ্য গুণগ্রাহী। তারা প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত জানান, বিকেল ৪টা থেকে অধ্যাপক যতীন সরকারের মরদেহ ময়মনসিংহ উদীচী কার্যালয়ের সামনে রাখা হবে। সেখানে তার ভক্ত অনুরাগীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হবে নেত্রকোণা শহরের সাতপাই এলাকায়। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্থানীয় শ্মশানে দাহ করা হবে।
অধ্যাপক যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক। সুদীর্ঘকাল ধরে তিনি মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দুই মেয়াদে তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৭ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য তিনি প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর নেন তিনি। অবসর গ্রহণের পর স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে নিজ জেলা নেত্রকোনায় চলে আসেন। সেখানেই শহরের সাতপাই এলাকার নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন।