ইউএনএফপিএ'র জরিপ
তরুণদের মধ্যে বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার আগ্রহ কমছে

পেশা, অর্থনৈতিক চাপ ও ব্যক্তিগত স্বার্থসহ নানা কারণে তরুণদের মধ্যে বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার আগ্রহ কমছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং ইউ গভ সার্ভে পরিচালিত এক যৌথ জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে ১৪টি দেশের ১৪ হাজার তরুণ অংশ নেন।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত হয় এ সভা।
বিশ্ব জনসংখ্যা এভাবে হ্রাস পেতে থাকলে একসময় তা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত স্টেট অব ওয়ার্ল্ভ্র পপুলেশন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা আট বিলিয়নের নিচে নেমে আসাও সমস্যা নয়। প্রকৃত সমস্যা হলো, প্রজনন হারে প্রভাব পড়া।
এর ফলে বিশ্বের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী সন্তান ধারণের সুযোগ অথবা আকাঙ্ক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত হলো অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন। আর্থিকভাবে সক্ষম হলে ক্ষমতায়নের পথ সহজ হয়। একটি সম্ভাবনাময়, ন্যায্য বিশ্ব গড়তে হলে আমাদের সমতা অর্জন করতে হবে।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে যত বাধা আছে, তা আমাদের ঝেরে ফেলতে হবে।’ উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা পছন্দের পরিবার গড়ার জন্য তারুণ্যের ক্ষমতায়নের কথা বলছি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা, সহায়ক পরিবেশ এবং সচেতনতা। তরুণদের উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করতে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’
জরিপে দেখা গেছে, একাধিক সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা বাস্তবে রূপ পায় না।
মূলত অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণেই প্রায় অর্ধেকেরও বেশি তরুণ পছন্দের সংখ্যা অনুযায়ী সন্তান গ্রহণে সক্ষম হয় না। প্রতি চারজনে একজন পছন্দমতো সময়ে সন্তান নিতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তাদের ৪০ শতাংশ পরবর্তী সময়ে সন্তান ধারণের আকাঙ্ক্ষাকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ১৩ শতাংশ তরুণের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং পরে সন্তান চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। ১৪ শতাংশ তরুণ উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবে সন্তান নিতে পারে না। ১৮ শতাংশ মানুষের পরিবার পরিকল্পনা অথবা প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র বিনির্মাণে তরুণসমাজের ভূমিকা কী হতে পারে, তা জাতি দেখেছে। তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং রোবটিকসের উন্নতি হচ্ছে, তার প্রভাব পড়বে জীবনের নানা ক্ষেত্রে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, বিশ্বের জনসংখ্যা ৮২৩ কোটি ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৭৫০। সর্বশেষ পাঁচ মিনিটে বিশ্বে এক হাজার ২৫০ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে এবং এক হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হয়, এ সংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছবে ২০৫৬ সালে। এক হাজার ৯০ কোটিতে পৌঁছবে ২০৯৮ সালে। এর পর থেকে এ সংখ্যা কমবে।