সানস্ক্রিন কীভাবে ত্বককে রক্ষা করে?

গ্রীষ্ম আর বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এলেও রোদের তীব্রতা এখনও কমেনি। পরিষ্কার আকাশে প্রতিদিনই পড়ছে কড়া রোদ, যার প্রভাব পড়ছে শিশু থেকে বয়স্ক সবার জীবনযাত্রায়। পরিমিত রোদ শরীরের জন্য উপকারী হলেও দীর্ঘক্ষণ সরাসরি রোদে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ঘামাচি বা চুলকানির মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে সানস্ক্রিন ব্যবহার হতে পারে একটি কার্যকর উপায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত দুই ধরনের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে। ইউভি-এ ত্বকের গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে এবং এর ফলে ত্বক কুঁচকে যাওয়া, ডিএনএ-এর ক্ষতি হওয়া, বয়সের তুলনায় ত্বকে বেশি ভাঁজ পড়াসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। ইউভি-বি ত্বকের উপরের দিকের স্তরগুলোতে প্রবেশ করতে পারে এবং এর ফলে ত্বক পুড়ে যাওয়া (সানবার্ন), এমনকি ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।
সানস্ক্রিন ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করতে ত্বকের উপরিভাগে একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে এবং এই স্তরের সাহায্যে ত্বকে অতিবেগুনি রশ্মির প্রবেশ রোধ করে। বাজারে দুই ধরনের সানস্ক্রিন প্রচলিত রয়েছে- ফিজিক্যাল এবং কেমিক্যাল সানস্ক্রিন। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনে জিংক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম অক্সাইড থাকে এবং এটি মূলত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিফলিত করে ত্বকের গভীরে প্রবেশে বাধা দেয়। কেমিক্যাল সানস্ক্রিনে অক্সিবেনজোন বা অক্টোক্রাইনের মতো উপাদানগুলো অতিবেগুনি রশ্মিকে তাপে রূপান্তরিত করে ত্বকের বাইরে রাখে।
বাংলাদেশের মতো ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোতে সূর্যের আলো সারা বছর তুলনামূলক সরাসরি পড়ায় এই অঞ্চলের সূর্যের আলোতে অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণ অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে। ফলে নিয়মিত বাইরে চলাচল করা হয় এমন সবার ত্বকের নানান সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়াতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে পানিশূন্যতা এবং রোদের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ, ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে চুলকানি, অতিরিক্ত ঘাম, ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, কোনো ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়া যারা দীর্ঘদিন দিনের একটা বড় সময় সরাসরি রোদের মধ্যে থাকেন তাদের ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের মানুষের ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে মেলানিনের পরিমাণ বেশি। ত্বকে অতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করলে ত্বকের প্রাকৃতিক মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যায়। যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়া, অসামঞ্জস্যপূর্ণ ত্বকের রং এবং মেলাসমা নামের রোগের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ত্বককে রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন—
-
পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবহার করুন: অনেকেই প্রয়োজনীয় পরিমাণের কম সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। মুখ ও কাঁধের জন্য অন্তত এক চা চামচ সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
-
পুনরায় ব্যবহার জরুরি: ঘাম, পানি বা হাতের স্পর্শে সানস্ক্রিন উঠে যেতে পারে। তাই টানা রোদে থাকলে অন্তত দুই ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন আবার ব্যবহার করা উচিত।
-
ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন বেছে নিন: এ ধরনের সানস্ক্রিন ইউভি-এ ও ইউভি-বি উভয় রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।
-
সময়মতো ব্যবহার করুন: কেমিক্যাল সানস্ক্রিন কার্যকর হতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় নেয়। তাই বাইরে যাওয়ার আগে সেই হিসাব করে লাগাতে হবে।
-
সঠিক এসপিএফ নির্বাচন করুন: এসপিএফ বা সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ঠেকানোর ক্ষমতা বোঝায়। এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন প্রায় ৯৭% ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিরোধ করে, আর এসপিএফ ৫০ সানস্ক্রিন প্রতিহত করে প্রায় ৯৯%।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সূর্যের তীব্র প্রভাবকে প্রায়ই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ এর ক্ষতি অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদে প্রকাশ পায়। তাই নিয়মিত মানসম্মত সানস্ক্রিন ব্যবহার ও সঠিক নিয়ম মেনে চলা ত্বককে দিতে পারে স্বল্পমেয়াদী আর দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা।