প্রিন্সেস ডায়ানার জীবনের যে গল্প অনেকের অজানা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৫ PM

প্রিন্সেস ডায়ানা বেঁচে থাকলে গতকাল তিনি ৬৪ বছরে পা দিতেন। কারণ ১ জুলাই তাঁর জন্মদিন। কিন্তু সময় থেমে আছে ১৯৯৭ সালের এক দুর্ঘটনার রাতে। তবু প্রিন্সেস ডায়ানার আলো নিভে যায়নি। তাঁকে বলা হয় ‘পিপলস প্রিন্সেস’। শুধু ব্রিটিশ রাজপরিবার নয়, বিশ্ববাসীর ভালোবাসার এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। জন্মদিন মানেই হাজারো চিঠি, কার্ড আর শুভেচ্ছাবার্তা, সবই হাতে নিয়ে পড়তেন তিনি, মন দিয়ে, হাসিমুখে।

বিয়ের আগে জন্মদিনগুলো লেডি ডায়ানা কাটাতেন পরিবারের সঙ্গে, কখনো দাতব্য সংস্থার আয়োজনে, আবার কখনো একান্ত নিজের মতো করে। আর বিচ্ছেদের পর? সেই দিনগুলো হয়ে উঠেছিল নিস্তব্ধ ও একাকী, তবুও অন্তরের দীপ্তি একটুও মলিন হয়নি।

এই বিশেষ দিনে তাঁর বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম জানিয়েছেন, মায়ের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে তিনি ‘হোমওয়ার্ডস ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। ডায়ানার দাতব্য কাজের উত্তরাধিকার এখন ছেলের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে।

জন্মদিনে চলুন ফিরে দেখা যাক সেই রাজকন্যার জীবনের কিছু কম জানা অধ্যায়, যেগুলো জানলে বিস্ময় থেমে থাকে না।

স্কুল ড্রপআউট থেকে রাজকন্যা

রাজকন্যা বলে হয়তো অনেকে ভাবেন, পড়াশোনায় দারুণ ছিলেন তিনি। কিন্তু না। ৯ বছর বয়স পর্যন্ত ডায়ানা পড়েছেন বাড়িতে, তারপর বোর্ডিং স্কুল। ও-লেভেল পরীক্ষায় ফেল করেন টানা দুইবার। শেষে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই স্কুল ছেড়ে দেন। সেই ডায়ানা-ই পরে হয়ে ওঠেন কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা।

পাঁচ ডলারে চাকরি

শুধু রাজপরিবার নয়, সাধারণ জীবনের স্বাদও চেখেছেন ডায়ানা। এক সময় কাজ করেছেন আয়া হিসেবে। ঘণ্টায় মাত্র ৫ ডলারের বিনিময়ে শিশুদের খেলা সঙ্গী হওয়া, জামাকাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা, সবই করতেন নির্দ্বিধায়। কাজ করেছেন একটি স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও।

চার্লসের চেয়ে একটু লম্বা

ডায়ানার উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। আর প্রিন্স চার্লসের থেকে তা সামান্য বেশি। তাই যেসব ছবিতে তাঁরা একসঙ্গে, সেখানে দেখা যায় ডায়ানা যেন ইচ্ছে করে একটু নিচু হয়ে দাঁড়ান। যেন চার্লসকে ছোট না দেখায়।

১৩ বার দেখা, তারপর বিয়ে

বিয়ের আগে কতদিন চেনাজানা হয়? অনেকের তো বছর কেটে যায়। কিন্তু চার্লস ও ডায়ানার মধ্যে পরিচয়ের গভীরতা ছিল মাত্র ১৩ বার দেখায়। তখন ডায়ানা ১৯, চার্লস ৩২। তবু সেই অল্প পরিচয়ই নিয়ে তাঁদের বাগদান ও রাজকীয় বিয়ে।

ধন্যবাদ জানানোর অভ্যাস

একটি ‘ধন্যবাদ’ শব্দে কতটা সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে, তা শিখিয়েছেন ডায়ানা। কর্মচারী হোক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, কিংবা এক সাধারণ ভক্ত, সবার কাছেই পাঠাতেন নিজের হাতে লেখা ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট। সেই নোট আজ মূল্যবান দলিল, নিলামে বিক্রি হয়েছে হাজার হাজার ডলারে।

প্রিন্সেস ডায়ানার হাত ধরেই সফট গ্ল্যাম ট্রেন্ডের শুরুপ্রিন্সেস ডায়ানার হাত ধরেই সফট গ্ল্যাম ট্রেন্ডের শুরু
সন্তান জন্মালেন হাসপাতালে

রাজপরিবারে রীতি ছিল, রাজকুমার-রাজকুমারীর জন্ম হবে প্রাসাদে, রাজকীয় নিয়মে। কিন্তু ডায়ানা সেই প্রথা ভেঙে দেন। প্রিন্স উইলিয়াম জন্ম নেন লন্ডনের সেন্ট মেরি’স হাসপাতালের লিন্ডো উইংয়ে। আর সেই থেকে রাজপরিবারের শিশুদের হাসপাতালেই জন্ম দেওয়া শুরু হয়।

রাজকীয় জীবনযাপন, বিয়ের জাঁকজমক, বিচ্ছেদ, ক্যামেরার সামনে-সংসার ভাঙনের নাটক, সবই দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু এই সবের মাঝে যিনি থেকেছেন সত্যিকারের মানুষ হয়ে, একজন মা হয়ে, একজন সহমর্মী সেবিকা হয়ে, তাঁর নাম ডায়ানা।

আজ সেই ভালোবাসার রাজকন্যার জন্মদিন। তাঁকে মনে পড়ছে আবারও, নতুন করে।