বিশ্ব ধরিত্রী দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪২ PM

আজ ২২ এপ্রিল, বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। প্রতিবছর ২২ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী উদযাপিত এই দিনটি পরিবেশ সংরক্ষণ ও পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই পালন করা হয়।

প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার নিয়ে এবারের বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে — ‘আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী’। পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য টিকিয়ে রাখার বার্তা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি।

জানা যায়, বিশ্ব ধরিত্রী দিবস প্রথম উদযাপিত হয় ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গে লর্ড নেলসন এই দিবসের প্রবর্তন করেন পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের লক্ষ্যে। সেই থেকে প্রতিবছর এ দিনটিকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়। বর্তমানে ১৯৩টিরও বেশি দেশে পালিত হয় ধরিত্রী দিবস।

বিশ্ব এখন জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়, বন উজাড়, প্লাস্টিক দূষণ ও অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান প্রজন্মের সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া টেকসই পৃথিবী নির্মাণ সম্ভব নয়। বিশ্ব ধরিত্রী দিবস সেই সচেতনতা তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

বাংলাদেশে আজ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ধরিত্রী দিবস পালিত হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ : বিপন্ন অথচ সম্ভাবনাময়

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ঘনবসতি এবং দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে পরিবেশগত সংকট দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। যদিও বৈশ্বিক গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০.৫ শতাংশেরও কম, তবুও তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কার্বন নির্গমনের ভয়াবহ প্রভাব আমাদের দেশেই সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে—প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, কৃষি উৎপাদনে পতন এসবই তার প্রতিচ্ছবি।

বর্তমানে দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরতা শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক চাপও তৈরি করে। ফলে, শক্তির উৎসে পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি। সৌর, বায়ু ও জৈবজ্বালানির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ালে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা যেমন সম্ভব, তেমনি তা অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক প্রমাণিত হবে।

২০২১ সালে ঘোষিত ‘জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি’-তে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজন ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, এবং বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা। পাশাপাশি, বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর রেয়াত, প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা এবং সরকারি প্রকল্পে সোলার প্যানেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার মতো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে টেকসই ও স্বনির্ভর শক্তি ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই এখন সময়ের চ্যালেঞ্জ এবং অঙ্গীকার।