আদর্শবান পরিবার গঠনে ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিটিজেন ডেক্স সিটিজেন ডেক্স
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৪, ০৫:০৫ PM

প্রত্যেক মানুষের জন্য পারিবারিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানাবিধ চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। ভদ্রতা, নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, কৃতজ্ঞতাবোধ শেখা, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন, কনিষ্ঠদের স্নেহ ও আদর করা, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা, পরোপকারিতার মানসিকতা গড়ে তোলা, উদার মানসিকতাবোধ জাগ্রত করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যতটা না অর্জন করা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিবার থেকে অর্জন করা যায়।

পৃথিবীর প্রথম পরিবার গড়ে ওঠে হজরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে। পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রথমত তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই ছিলেন। সৃষ্টির পর মহান আল্লাহ এ পরিবারকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম! তুমি আর তোমার স্ত্রী দুজনই জান্নাতে বসবাস করো।’ (সুরা বাকারা ৩৫)

জান্নাতে কিছুদিন বসবাসের পর আল্লাহর হুকুমে তারা পৃথিবীতে আগমন করেন। তাদের থেকে জন্ম নেয় তাদের সন্তান-সন্ততি। এভাবে পৃথিবীতে পরিবার ও পারিবারিক ব্যবস্থার সূচনা হয়। আর পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সুরা নিসা ১) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে। তারপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পারো।’ (সুরা হুজরাত ১৩)


উপরোক্ত আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, পারিবারিক বন্ধন থেকেই মানব বংশ সম্প্রসারণ হয়েছে। যদি সব জাতি ও গোত্রের লোকেরা বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তবে সে পরিবার সমাজে সর্বোত্তম আদর্শ পরিবার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। যেখানে বইতে থাকে শান্তির ফল্গুধারা। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জীবন হবে আনন্দময়।

পরিবারের সদস্যরা যখন আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকবে তখন সবাই অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে লাভ করবে। স্বামী-স্ত্রী যখন পরস্পর পরস্পরের কাছে তাদের অধিকার পাবে, সন্তান যখন বাবা-মায়ের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য এবং তাদের অধিকার লাভ করবে, আত্মীয়স্বজন যখন পরস্পরকে যথাযথভাবে সম্মান করবে, তখন কোনো স্ত্রী আর বক্রতা প্রকাশ করবে না, কোনো স্বামী অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হবে না, কোনো সন্তানই বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করবে না এবং আত্মীয়স্বজনের সম্পর্কের দৃঢ়তায় আল্লাহর রহমত, বরকত ও অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকবে। শুধু তাই নয়, ইসলাম নির্দেশিত পারিবারিক জীবন হলো আল্লাহ তায়ালার মহা অনুগ্রহ।

মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত পারিবারিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলে সমাজ থেকে মহামারীর আকার ধারণকারী পরকীয়া, মাদকাসক্তি, ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যাসহ সব ধরনের অপরাধ প্রবণতা এবং জীবনের শেষ সময়ে বৃদ্ধাশ্রমের মতো দুঃখী জীবনযাপন চিরতরে নির্মূল হবে। তাই একটি সুন্দর ও আদর্শ পরিবার গঠনের লক্ষ্যে আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনাসমূহ মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানের অপরিহার্য দাবি।

আদর্শ ও উত্তম পরিবার গঠনে পরিবারের দায়িত্বশীলের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা একটা অস্থির পৃথিবীতে বাস করছি। আর এই অস্থির সময়ে সবচেয়ে অবহেলিত ও উপেক্ষিত একটা শব্দ হচ্ছে পরিবার। এখন পরিবারগুলো যখন তখন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে, পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখা কিংবা পরিবারের জন্য ত্যাগ করা যেন এখন সেকেলে ধারণা এবং আধুনিক সমাজে অচল। অথচ পরিবার হচ্ছে সমাজ কাঠামোর মূল ভিত্তি। সুখী পরিবার একটি সুখী সমাজ বা রাষ্ট্র গঠনের পূর্বশর্ত। আর একটি সুন্দর পরিবার গঠনের পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিবারকে ইসলামের আদলে গড়ে তোলা।

বিশ্বনবীর ছোট একটি হাদিসের মাধ্যমে তা তুলে ধরতে চাই। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তুমি একটি দিনার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, একটি দিনার ক্রীতদাস মুক্তিতে ব্যয় করেছ, একটি দিনার মিসকিনকে দান করেছ এবং একটি দিনার পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করেছ। এ খরচ করা দিনারগুলোর মধ্যে নিজ পরিবারের লোকদের জন্য খরচ করা দিনারের মূল্য প্রতিদান লাভের দিক থেকে সর্বোত্তম। (সহিহ মুসলিম) সুতরাং মহান আল্লাহ এবং তার রাসুলের বিধান অনুযায়ী পরিবার গঠন করলে সে পরিবার হবে একটি আদর্শ ও সর্বোত্তম পরিবার।

পরিবারের সুখ, শান্তি এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়াও রয়েছে একটি আইনগত ও সামাজিক দিক। জীবনের সব পর্যায়ে যদি আল্লাহ প্রদত্ত এবং মহানবী (সা.) প্রদর্শিত বিধান মেনে চলা যায়, তাহলেই পারিবারিক বিপর্যয় রোধ সম্ভব হবে। অন্যথায় মানবীয় প্রচেষ্টা মরীচিকার মতো নিষ্ফল ও ব্যর্থ হতে বাধ্য। ইসলামে পরিবারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। নৈতিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে মানবতার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের শিক্ষা পরিবার থেকে লাভ করে মুসলিম সন্তানরা। তাই আসুন, আমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবার প্রতিষ্ঠা করি। তাহলে একটি সমাজ ও রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গ ইসলামের আওতায় আসতে বাধ্য।