দুবাইয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৪ PM

গত কয়েকদিন ধরে মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। এতে দেশটিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। আর দেশটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের মধ্যে একটি হলো দুবাই। শহরটির রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শপিং মল ও বিমানবন্দর থইথই করছে পানি। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে বিমানসহ সকল পরিবহন পরিষেবা। 
 
মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। আর সেই দেশটিতেই এখন প্রবল বৃষ্টিপাত, ভয়াবহ বন্যা। গত মঙ্গলবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুবাইয়ের বিরল এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

তাতে দেখা যায়, রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে বিমানবন্দর সব পানিতে টইটুম্বুর। কোমর পানির স্রোতে খেলনার মতো ভাসছে বুগাতি, ফেরারি ও মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো দামি দামি গাড়ি। 
 
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পোস্ট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যবহারকারকারী লেখেন, ‘আমি নিশ্চিত মানুষজন ঘর থেকে বের হবে না। রাস্তাঘাট নদীতে পরিণত হয়েছে।’ 

সংযুক্ত আরব আমিরাত আবহাওয়া দপ্তর বলছে, গত ৭৫ বছরে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, মরুর দেশে হঠাৎ কেন এত বৃষ্টিপাত? এর জন্য ‘ক্লাউড সিডিং’কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
  
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আকাশে ভেসে থাকা বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘনীভবন প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি না হলে ড্রাই আইস অথবা সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করে মেঘের ঘনীভবন ঘটানো যায়।
 
ড্রাই আইসের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। ভেসে থাকা মেঘের ওপর এই ড্রাই আইসের গুড়া ছড়িয়ে দিলে সেটা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ে। এই প্রক্রিয়াকেই ক্লাউড সিডিং বলা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি সপ্তাহে যে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, এর মূল কারণ ক্লাউড সিডিং। পানির নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০২ সাল থেকে অর্থাৎ গত প্রায় ২২ বছর ধরে এই ক্লাউড সিডিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশটির সরকার।

পরিবেশবিদদের মতে, ক্লাউড সিডিং পরিবেশের জন্য ভাল নয়। এর নানান ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেসব এলাকায় ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেখানে সাধারণত অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য পরিকাঠামো থাকে না। ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া বিভাগ ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি বৃষ্টি নামানোর লক্ষ্যে গত সোমবার ও মঙ্গলবার আল আইন বিমানবন্দর থেকে ক্লাউড সিডিং বিমান প্রেরণ করে। এর ফলে এই দুইদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়।
 
সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিবেশী দেশ ওমানেও প্রবল বর্ষণ হয়েছে।  যার ফলে দেশটিতে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি, খালিজ টাইমস, আল জাজিরা