সমুদ্রপথে প্রথমবার গাজার বন্দরে ভিড়লো ত্রাণভর্তি জাহাজ
ইসরায়েলি বাহিনীর প্রায় ৬ মাস ধরে চলমান অভিযানে বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকার উপকূলে এই প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ পৌঁছেছে। গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকেলে গাজার উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছায় ২০০ টন খাদ্যপণ্যবাহী স্পেনীয় জাহাজ ‘ওপেন আর্মস’। খবর বিবিসি।
এর আগে গত ১২ মার্চ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অন্যতম দেশ সাইপ্রাসের লারনাকা বন্দর থেকে রওনা হয় জাহাজটি। তিন দিন পর গাজার উপকূলে নোঙ্গর করল ওপেন আর্মস। গাজায় কোনো সমুদ্রবন্দর না থাকায় উপকূল থেকে বেশ দূরেই নোঙ্গর করতে হয়েছে জাহাজটিকে।
তবে স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগে গাজার বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে গাজা সিটির শেখ আজলিন এলাকায় একটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। জাহাজ থেকে ত্রাণপণ্যের কার্টন খালাসের পর নৌকার মাধ্যমে সেগুলো নিয়ে আসা হয়েছে জেটিতে।
এই ২০০ টন ত্রাণের মধ্যে রয়েছে চাল, ময়দা, শিম, ক্যানজাত সবজি এবং ক্যানজাত মাংস। স্পেনের দাতব্য সংস্থা ওপেন আর্মস, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের যৌথ উদ্যোগ ও অর্থায়নে পাঠানো হয়েছে এসব খাদ্যপণ্য। যে জাহাজটিতে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে, সেটির মালিক ওপেন আর্মস।
ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর আগে দারিদ্র্য ও বেকারত্বপীড়িত গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্থিনির এক তৃতীয়াংশই ত্রাণের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। স্বাভাবিক অবস্থায় গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ সীমান্ত দিয়ে উপত্যকায় ত্রাণের সরবরাহ পৌঁছাত।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর স্থল সীমান্ত দিয়ে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ কিছুদিন বিমান থেকে উপত্যকায় ত্রাণ ফেলেছে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি তেমন লাভজনক হয়নি।
কয়েক দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন গাজায় সমুদ্রপথে ত্রাণ পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র এবং এ লক্ষ্যে উপত্যকায় শিগগিরই একটি অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছেন মার্কিন সেনারা। এ কারণে গাজা উপকূলে ওপেন আর্মসের আগমনকে সেখানে জলপথে ত্রাণ সরবরাহের ‘ট্রায়াল’ বলে মনে করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় রওনা হওয়ার আগে সাইপ্রাস উপকূলে জাহাজটি তল্লাশি করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
শুক্রবার ওপেন আর্মস গাজা উপকূলের কাছে নোঙ্গর করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় ওয়ার্ল্ড সেন্টার কিচেনের প্রতিষ্ঠাতা ও শীর্ষ নির্বাহী জোসে অ্যান্দ্রেজ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লেখেন, ‘আমরা পেরেছি!’
তিনি আরও জানান, সামনের সপ্তাহগুলোতে গাজায় আরও সরবরাহ পাঠানো হবে।