গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ছাড়ালো ৩১ হাজার; ৭২ শতাংশই শিশু ও নারী
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও ৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩১ হাজার। ইসরায়েলের এই হামলায় নিহতদের ৭২ শতাংশই নারী ও শিশু।
এছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। রবিবার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে অন্তত ৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১৩০ জন আহত হয়েছেন বলে রোববার ওই অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজা উপত্যকায় পরিবারগুলোর ওপর আটটি গণহত্যা চালিয়েছে। এতে করে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫ জন শহীদ এবং আরও ১৩০ জন আহত হয়েছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’
গাজায় অপুষ্টি এবং ডিহাইড্রেশনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে: ‘গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিহতদের ৭২ শতাংশই শিশু এবং নারী।’
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) অস্থায়ী রায়কে লঙ্ঘন করে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ৩১ হাজার ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত এসব মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া হামলায় আরও ৭২ হাজার ৬৫৪ জন আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক অন্তর্বর্তী রায়ে এই আদালত তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।