উত্তেজনার মধ্যে বন্ধ ভারতের ২১ বিমানবন্দর

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা এখন প্রায় যুদ্ধাবস্থার রূপ নিয়েছে। টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলা পাল্টাপাল্টি হুমকির পর ভারত এবার পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের কয়েকটি স্থানে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তানও।
ভারতের হামলার পরপরই দেশটির ৫টি অত্যাধুনিক বিমানসহ একটি সেনা সদরদপ্তর গুড়িয়ে দিয়েছে তাদের সেনারা। এমনকি ভারতকে কঠিন জবাব দিতে প্রয়োজনীয় যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের অনুমতিও পেয়ে গেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভারতকে তার হামলার চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। এমন অবস্থায় উত্তরাঞ্চলের কমপক্ষে ২১টি বিমানবন্দর আগামী ১০ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার।
বুধবার (৭ মে) রাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের অন্তত ২১টি বিমানবন্দর আগামী ১০ মে পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব বিমানবন্দর ১০ মে ভোর ৫টা ২৯ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
বন্ধ রাখা এসব বিমানবন্দরগুলো কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মির ও লেহ-এর পাশাপাশি পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান ও গুজরাটের মতো রাজ্যগুলোতে অবস্থিত। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের বড় একটি অংশ বাতিল হয়েছে।
এছাড়া ভারত থেকে আন্তর্জাতিক কিছু ফ্লাইটও বাধাগ্রস্ত হয়েছে, কারণ পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করতে না পারায় অনেক ফ্লাইট ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে।
দ্য হিন্দু বলছে, বন্ধ থাকা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান বিমানবন্দরগুলো হলো: জম্মু ও কাশ্মিরের জম্মু, শ্রীনগর ও লেহ, পাঞ্জাবের অমৃতসর, চণ্ডীগড়, পাতিয়ালা, হালওয়ারা, হিমাচল প্রদেশের শিমলা, ধর্মশালা, রাজস্থানের জোধপুর, বিকানের, জয়সালমের, কিশনগড়, গুজরাটের ভুজ, জামনগর, রাজকোট, মুন্দরা, পোরবন্দর, কান্ডলা এবং কেশোদ।
এছাড়া গোয়ালিয়র ও হিন্ডন বিমানবন্দরও এই তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। এই বিমানবন্দরগুলোর অনেকগুলোই বেসামরিক ও সামরিক উভয় ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করে।
ভারতীয় বিমান সংস্থা ইন্ডিগো এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তারা ১১টি বিমানবন্দর থেকে ১৬৫টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়া ৯টি বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট বাতিল করেছে। আর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অমৃতসর, গোয়ালিয়র, জম্মু, শ্রীনগর ও হিন্ডন থেকে তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।
পাশাপাশি আরেক বাজেট এয়ারলাইন্স স্পাইসজেট লেহ, শ্রীনগর, জম্মু, ধর্মশালা, কান্ডলা ও অমৃতসরের ফ্লাইট বাতিল করেছে। অন্যদিকে আকাশ এয়ার শ্রীনগরের সব ফ্লাইট ৯ মে পর্যন্ত বাতিল করেছে।
দ্য হিন্দু বলছে, বুধবার সকাল থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এ দেখা গেছে, নয়া দিল্লির উত্তরাংশে বাণিজ্যিক কোনো ফ্লাইট চলছিল না, একমাত্র দেহরাদুন ছাড়া।
সামাজিক মাধ্যমে যাত্রীদের সতর্ক করার পাশাপাশি ফ্লাইট স্ট্যাটাস দেখে ভ্রমণ পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিচ্ছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস। বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর জন্য বিনামূল্যে রিশিডিউল বা সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
অন্যদিকে মার্কিন বিমান সংস্থা আমেরিকান ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনস তাদের দিল্লিগামী ফ্লাইট বাতিল করেছে। এছাড়া পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপ থেকে আসা কিছু ফ্লাইট বিকল্প বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনস জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা দিল্লির ফ্লাইট বাতিল করেছি। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।