কলম্বিয়াকে কাঁদিয়ে ১৬ বারের মতো কোপা ঘরে তুললো আর্জেন্টিনা
মঞ্চটা আগেই প্রস্তুতই ছিল। তবে অপেক্ষা কেবল উৎসবের। অপেক্ষা বিশ্বকাপজয়ী ডি মারিয়ার বিদায়ের। অপেক্ষা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬ বার শিরোপা ঘরে তোলার। টানাটান উত্তেজনা, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পরসা শেষে কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দিয়েই ডি মারিয়ার বিদায় রাঙাল আর্জেন্টিনা।
আনহেল দি মারিয়ার জন্য শিরোপাটা জিততে হবে – ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনার পণ ছিল এমনই। কিন্তু ম্যাচ দ্বিতীয়ার্ধে গড়াতে গড়াতে আর্জেন্টিনার জন্য প্রেরণা হয়ে গেল দুটি – দি মারিয়ার পাশাপাশি লিওনেল মেসির জন্যও যে খেলতে হবে!
প্রথমার্ধে পাওয়া চোটের ধাক্কা সয়ে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামতে পারলেও বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেননি মেসি। ৬৫ মিনিটে উঠে যান, ডাগআউটে গিয়েই সে কী কান্না আর্জেন্টিনা অধিনায়কের!
ওই কান্নাই যেন আর্জেন্টিনাকে আরও তাতিয়ে দিল। কলম্বিয়াই আজ দাপুটে খেলেছে, তবে মেসিকে শিরোপা এনে দেওয়ার তাড়ণায়ই কি না, দ্বিতীয়ার্ধে আগ্রাসী হয়েছে আর্জেন্টিনাও।
শেষ পর্যন্ত মেসি আর দি মারিয়াকে শিরোপা উপহার দেওয়ার চেষ্টায় সফলই হয়ে গেল। ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধও কোনো গোল না দেখলেও ১১২তম মিনিটে লওতারো মার্তিনেসের গোলে ১-০ ব্যবধানে জিতে গেল আর্জেন্টিনা।
মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে আজ প্রথমার্ধে দাপুটে ছিল কলম্বিয়াই। ৫ মিনিটেই লুইস দিয়াসের শট ঠেকাতে হয় আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে, দুই মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে জন কর্দোবার শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়।
উলটো দিকে ২০ মিনিটে লিওনেল মেসির শট তাঁরই সতীর্থ হুলিয়ান আলভারেসের পায়ে লাগায় গোলবঞ্চিত হলো আর্জেন্টিনা।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্যেই প্রথমার্ধের শেষ দিকে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কলজে চলে এল ঠোঁটের ডগায়। কলম্বিয়া ডিফেন্ডার দাভিনসন সানচেসের ট্যাকলে যে পায়ের গোড়ালিতে বাজেভাবে আঘাত পান মেসি। মাঠেই গড়াতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার মাঠে ফেরেন, তবে মেসির খোঁড়ানো দেখেই প্রমাদ গোনে আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে মেসি মাঠে ফিরেছেন বটে, তবে ৬৩ মিনিটে আবারও তাঁকে ট্যাকল করা হয়, এবং এবারও একই জায়গায়! এবারে আর ফেরা হলো না! ৬৫ মিনিটে শেষ পর্যন্ত উঠে যেতেই হয়। ডাগআউটে গিয়ে সে কী কান্না মেসির! এ-ই কি তবে শেষ মেসির? উত্তরের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
মেসি উঠে গেলেও বিরতির পর আর্জেন্টিনার খেলাটা প্রথমার্ধের তুলনায় বেশ গোছানো হয়েছে। মেসির বদলি নামা নিকো গনসালেসই একবার বল জালে জড়িয়েছিলেন, তবে তাঁকে পাস দেওয়ার সময়ে তাগলিয়াফিকো অফসাইডে থাকায় গোলটি বাতিল হয়। ৮০ মিনিটেও বক্সে বল পেয়েও শট নিতে পারেননি গনসালেস।
অতিরিক্ত সময়েও সহজ আরেকটি সুযোগ নষ্ট করেন গনসালেস। ৯৫ মিনিটে রদ্রিগো দে পলের দারুণ পাসের পরও গনসালেসের শটটা ঠিকমতো হয়নি, সহজেই ফিরিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলকিপার।
তবে ১১২ মিনিটে আর পারেনি কলম্বিয়া। কলম্বিয়ার রক্ষণের ভুলে বক্সের বাইরে বল পেয়ে গেলেন বদলি নামা মিডফিল্ডার জিওভান্নি লো সেলসো, তাঁর প্রথম স্পর্শের দারুণ ফ্লিক একেবারে ফাঁকা করে দিল বদলি নামা স্ট্রাইকার লওতারো মার্তিনেসকে। গোলকিপারকে একা পেয়ে আর ভুল হলো না মার্তিনেসের। ইন্তের মিলানের হয়ে দারুণ ছন্দে থাকা মার্তিনেসের শট জালে, আর্জেন্টিনার উল্লাসে ফেটে পড়ার শুরু।
এর কিছুক্ষণ পরই অবশ্য দি মারিয়াকে তুলে নেন আর্জেন্টিনা কোচ। তাঁর বদলে ডিফেন্ডার নামিয়ে বাকি সময়টা পার করে দেওয়া তো ছিলই, পাশাপাশি পুরো স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডিং ওভেশনটাও যাতে দি মারিয়া পান, সেটি নিশ্চিত করাও হয়তো স্কালোনির উদ্দেশ্য ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনার দাপুটে হওয়ার শুরু থেকেই গা জোয়ারি হয়ে ওঠা কলম্বিয়া ওই গোলের পর আরও ভেঙে পড়ল। শেষ পর্যন্ত ওই ধাক্কাধাক্কিই সার হলো তাদের, গোলের কাছে আর যাওয়া হলো না।
হাসি ফুটল মেসির মুখে। দি মারিয়াও হাসলেন। আর্জেন্টিনাকে যে সর্বজয়ী করে গেল তাঁদের দুজনের মিলিত অধ্যায়।