ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলে চাকরি হারানো ফুটবলার ফিরে পেলেন চাকরি
আজ থেকে প্রায় আট মাস আগে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধে গাজায় নির্বিচারে নিহতদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে কথা বলেছিলেন তিনি। এ-ই নাকি ছিল আনওয়ার এল-গাজির ‘অপরাধ!’ যে অপরাধে শেষ পর্যন্ত জার্মানিতে তাঁর ক্লাব মাইঞ্জ তাঁর সঙ্গে চুক্তিই বাতিল করে দেয়, তা-ও বিনা নোটিশে।
গত নভেম্বরে এ ঘটনার পর আদালতে মামলা করেছিলেন এল-গাজি। আজ এসেছে সে মামলার রায়, মাইঞ্জের শ্রম আদালতের রায়টা এল-গাজির পক্ষেই গেছে। আদালত মাইঞ্জকে নির্দেশ দিয়েছেন, ২৯ বছর বয়সী ডাচ উইঙ্গারকে তাঁদের ক্লাবে চুক্তি ফিরিয়ে দিতে তো হবেই, গত ৮ মাসের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৭ লাখ ইউরো দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন – বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ২২ কোটি টাকা।
আদালতের রায়, মাইঞ্জ যে বিনা নোটিশে এল-গাজির চুক্তি বাতিল করেছে, সেটা একেবারেই আইনসিদ্ধ হয়নি। সে কারণেই তাঁকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মাইঞ্জের সঙ্গে এল-গাজির চুক্তির মেয়াদ প্রাথমিকভাবে গত জুন পর্যন্তই ছিল, কিন্তু গত মৌসুমে মাইঞ্জ জার্মান বুন্দেসলিগা থেকে অবনমন এড়ানোয় চুক্তির শর্ত অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চুক্তির মেয়াদ এক মৌসুমের জন্য বেড়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে ‘ফ্রি ট্রান্সফারে’ মাইঞ্জে যোগ দেওয়া এল-গাজি চুক্তি বাতিলের আগ পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে মাত্র তিন ম্যাচ খেলেছিলেন।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় শত শত নিরপরাধ নারী-পুরুষ ও শিশুর প্রাণ হারানোর ব্যথায় গত অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথমে একটি পোস্ট দিয়ে ডিলিট করে দেন এল-গাজি। সে পোস্টের জন্য তাঁকে প্রথমে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে মাইঞ্জ। পোস্টে ঠিক কী লিখেছিলেন এল-গাজি, তা জানা যায়নি, তবে সেটা যে ফিলিস্তিনের পক্ষে ও ইসরায়েলের বিপক্ষে ছিল তা বুঝতে কষ্ট হয় না।
এরপর ঝামেলা বাড়ে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার সময়ে মাইঞ্জের দেওয়া বিবৃতির পর। এল-গাজিকে অনুশীলনে ফেরার সুযোগ দেওয়ার খবর জানিয়ে মাইঞ্জ লেখে, এল-গাজি আসলে সব ধরনের হামলার বিপক্ষেই কথা বলেছেন, যার মধ্যে হামাসের হামলার প্রতিবাদও আছে। পাশাপাশি ইসরায়েল রাষ্ট্রটির থাকার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি এল-গাজি, এমনটাও জানিয়ে দেয় মাইঞ্জ।
কিন্তু এরপরই এল-গাজি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবার পোস্ট দিয়ে লেখেন, তাঁর ব্যাপারে এই বিবৃতি দেওয়ার আগে মাইঞ্জ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আরেক পোস্টে মানবতার পক্ষে ও শোষিতদের পাশে আজীবন থাকবেন জানিয়ে গাজায় এর আগের তিন সপ্তাহে ৩৫০০ শিশুর নির্বিচার হত্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এল-গাজি। গাজায় এমন মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করার তাগিদও দেন।
এরপরই তাঁকে নিষিদ্ধ করে মাইঞ্জ। তবে সে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পরও এল-গাজি পোস্টে লেখেন, ‘যেটা সঠিক, সেটার পাশেই দাঁড়ান। তাতে যদি একাই দাঁড়াতে হয়, তা-ই সই। গাজায় নিরীহ ও অসহায় মানুষের ওপর যে নরক নেমে এসেছে, তার তুলনায় আমার জীবিকা হারানো কিছুই না!’