দেশের বাজারে দাম কমেছে পেঁয়াজের
রমজান শুরুর আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া হয়ে যায়। প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামই অসৎ উপায়ে বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। তবে এবার দরপতন ঘটেছে পেঁয়াজের। বাজারে দরপতন ঘটার কারণ হিসেবে স্থানীয় কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পবিত্র রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রির আশায় পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। এখন সেই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। এর সাথে যোগ হয়েছে, কৃষকেরাও নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রির জন্য তুলতে শুরু করেছেন।
পাবনা সদরের হাজির হাটে প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবারে পাইকারি পেঁয়াজের হাট বসে। মঙ্গলবার এই হাটে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় প্রতি মন পাইকারি দরে বিক্রি হয়। সুজানগর উপজেলা সদরে প্রতি রোব ও বুধবার পাইকারি পেঁয়াজের হাট বসে। গত বুধবার (১৩ মার্চ) এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এর পর থেকেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে। গেল রোববারে এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা হাটেও পেঁয়াজের দরপতনের একই চিত্র। রোববার এ হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এসব হাটে হতাশ হয়ে অনেক কৃষক দাম না পেয়ে বিক্রির জন্য আনা পেঁয়াজ নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
হাজির হাটের কয়েক পাইকার বলেন, রোজার সময় বেশি দামের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। রোজা শুরু হলে মজুত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। অন্যদিকে কৃষকেরাও বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ হাটে তুলেছেন। তাতে দরপতন ঘটে। তারা আরও বলেন, মাঠে থাকা পেঁয়াজ পরিপূর্ণ হতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। তার আগেই কৃষকেরা তড়িঘড়ি করে পেঁয়াজ বাজারে তুলছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলি বললেন, পাবনায় মুড়িকাটা জাতের আগাম পেঁয়াজ, অপরটি হালি পেঁয়াজ দুই জাতের আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ টন। এ পেঁয়াজ ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। ৭ লাখ ৬০ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এদিকে পেঁয়াজের আকস্মিক দরপতনে কৃষকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। দাম আরও কমে গেলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
এক পেঁয়াজ চাষী বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত তাদের ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ মণ। তাতে বর্তমান দামে বিক্রি করা গেলে তারা কিছটাু লাভের দেখা পাবেন। লোকসান হবে দাম আরও কমে গেলে।
এক কৃষক বলেন, গত বছর এ সময়ে বাজারে পেঁয়াজের ভালো দাম ছিল। ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এ বছর দাম সেই তুলনায় কম।
পেঁয়াজ চাষীরা বলছেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম যেভাবে কমতে শুরু করেছে এবং তা যদি অব্যাহত থাকে, তাতে আবাদের টাকা তোলা দায় হয়ে যাবে। ঋণ করে, ধার দেনা করে পেঁয়াজ চাষ করেছি।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানের দাম চলমান থাকলে কৃষকের লোকসান হবে না।