ঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থকর, দূষণে বিশ্বে পঞ্চম

চলতি বছর বায়ুদূষণে রেকর্ড গড়েছে রাজধানী ঢাকা। প্রায় প্রতিদিনই দূষণে শীর্ষে অবস্থান করেছে। ঢাকার বাতাসে আজও মানের কোনো উন্নতি নেই। বাতাসের গুণমান সূচক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবারের মতো আজ বুধবারও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর।
আজ বুধবার (১২ মার্চ) বিশ্বে বায়ুদূষণের সূচকে ১২৫টি দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে আছে ঢাকা। বাতাসের গুণমান সূচকে (একিউআই) গতকাল মঙ্গলবারও একই স্থানে ছিল ঢাকা। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী বায়ুমান ছিল ১৮৩। আজ বুধবার তালিকায় অবস্থান পরিবর্তন না হলেও বায়ুমানে দূষণের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সকাল ৮টা ২৩ মিনিটের হালনাগাদ রেকর্ডে ঢাকার বায়ুমান ১৭৯, যা অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
আজ একিউআইয়ের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষ দুটি শহরই ভারতের। প্রথম স্থানে দিল্লি (২২৯) এবং দ্বিতীয় স্থানে আছে মুম্বাই (১৯৫)। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে যথাক্রমে আছে—পোল্যান্ডের ওয়ারস (১৯৩) ও নেপালের কাঠমান্ডু (১৯০)।
চলতি বছরের ১২ মার্চ পর্যন্ত দূষণের যে তথ্য রেকর্ড করেছে আইকিউএয়ার, তাতে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। প্রথম স্থানে আছে আফ্রিকার দেশ চাদ। গত বছরও সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ ছিল বাংলাদেশ ও চাদ।
বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) দিয়ে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ-এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।