মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট
-1220852.jpg?v=1.1)
মধ্যরাতে উত্তেজনায় ফেটে পড়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডডিটে এক শিক্ষার্থীর আইডি থেকে সহপাঠীকে ধর্ষণ, বোরকা-হিজাব ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ার পর বিচার দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসংলগ্ন ডিএসডব্লিউ (ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর) ভবনের সামনে জড়ো হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল ও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম শ্রীশান্ত রায়ে। তিনি বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং আহসানউল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, রেডিটের স্ক্রিনশটে নারী সহপাঠীকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সে ধর্ষণ করেছে। এছাড়াও বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে সে। এমন একজন আমাদের সহপাঠী হতে পারে না। আমাদের দাবি আমরা তার বহিষ্কার চাই এবং তার ধর্ষণের বিচার করতে হবে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অভিযুক্ত শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে বুয়েট ২১ ব্যাচের প্রকাশিত ধর্ষণ ও প্রমাণের মিলসমূহ হলো-
১) রেডডিট ব্যবহারকারী নিজেকে ‘বুয়েট ইইই-২১’-এর শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
২) একাধিক মন্তব্যে সে বাসইউস ব্র্যান্ডের এয়ারবাডস ব্যবহার করেন বলে উল্লেখ করেছেন — যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর সঙ্গেও মেলে।
৩) রেডডিট আইডি থেকে জানা যায়, সে জুন মাসে মুুসটাং, নেপাল সফর করেছেন — একই সময়ে (৩ জুন) শ্রীশান্ত রায় তার ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসটাং থেকে ছবি পোস্ট করেছেন।
৪) উক্ত রেডডিট আইডির অশালীন মন্তব্যগুলির ভাষা, টোন ও লেখনশৈলী বহু সহপাঠী শনাক্ত করেছেন, যা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর স্বভাবগত লেখনভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৫) যখন বুয়েট শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি-বর্জনের পক্ষে সম্মিলিত স্বাক্ষর প্রদান করেন, তখন একমাত্র সেই কাগজে স্বাক্ষর করেননি — যা তার দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
উল্লিখিত প্রমাণ ও মিলের ভিত্তিতে আমরা দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করছি যে আমাদের ব্যাচের শ্রীশান্ত রায়ই উক্ত রেডডিট আইডির ব্যবহারকারী এবং সে-ই সচেতনভাবে নারীদের প্রতি অশালীন, লাঞ্ছনাকর ও হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন।
তবে, যদি ওর কাছ থেকে আগেও এ রকম কোনো আচরণের শিকার হয়ে থাকে বা কোনো প্রমাণ থেকে থাকে, সে যেন গোপনীয়তা বজায় রেখে হলেও সেটা প্রকাশ্যে আনে।
পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের '২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায় (আইডিঃ ২১০৬১৬৯)-এর ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করা হলো।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে আগামীকাল (বুধবার) বুয়েট উপাচার্যের সাথে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।