বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও আমাদের ভাবনা
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো এই দিবস উদযাপন করা শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতি বছরই দিবসটি সারাবিশ্বের বিভিন্ন শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ — এবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন উপলক্ষে সরকারিভাবে বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে নেওয়া কর্মসূচি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে জানান, বুধবার (৫ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করবেন। এসময় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) পলাশ ও বেলগাছের দুটি চারা রোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’।
৫ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে বৃক্ষমেলা
জানা গেছে, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিতব্য পরিবেশ মেলা চলবে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা চলবে ৫ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২৩ ও ২০২৪, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৩, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২২ ও ২০২৩ এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে।
সারাদেশেই পালন করা হবে বিভিন্ন কর্মসূচি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় এবং ঢাকা মহানগরীর ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হবে। দিবসটি ঘিরে শিশু চিত্রাঙ্কন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিতর্ক ও স্লোগান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও বৃক্ষ মেলার আয়োজনে করা হবে। সেখানেও শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। একইসাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বিভিন্ন গাছের চারা বিতরণ করা হবে।
এছাড়া এবছর বর্ষা মৌসুমে সারাদেশে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
যেভাবে শুরু হয়েছিল পরিবেশ দিবসের যাত্রা
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগের কথা। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তখন সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনটি ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায়। পরে ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৭৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবছর দিবসটি সারা বিশ্বে পালন করা হচ্ছে।