নিকাব-বোরকা নিষিদ্ধ করছে পর্তুগাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৩ PM

ইতিপূর্বে নিকাব ও বোরকা নিষিদ্ধ করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ইউরোপের একাধিক দেশ। এবার এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে পর্তুগাল। জনসমক্ষে নিকাব ও বোরকা পরা নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে ইউরোপের এই দেশটিতে। এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়েছে দেশটির পার্লামেন্টে। 

মূলত, ‘লিঙ্গভিত্তিক ও ধর্মীয় উদ্দেশে মুখ ঢেকে রাখা পোশাক’ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব নিয়ে বিলটি উত্থাপন করে পর্তুগালের অতি ডানপন্থি রাজনৈতিক দল চেগা পার্টি। খবর আল জাজিরার। 

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত সংসদীয় অধিবেশনে বিলটি পাস হয়। এতে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত স্থান বা জনসমক্ষে নিকাব পরলে ২০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আর কাউকে জোর করে নিকাব পরতে বাধ্য করলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে, ব্যতিক্রম হিসেবে উড়োজাহাজ, কূটনৈতিক এলাকা এবং উপাসনালয়ে নিকাব পরার অনুমতি থাকবে।

বিলটি অবশ্য এখনই আইন হিসেবে কার্যকর হচ্ছে না। এটি প্রথমে পাঠানো হবে সংসদের সাংবিধানিক বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে, যেখানে বিলটি পর্যালোচনা করা হবে। এরপর পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুজা বিলটিতে স্বাক্ষর করবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। চাইলে তিনি এটি পুনর্বিবেচনার জন্য সাংবিধানিক আদালতে পাঠাতে পারেন।

এটি আইনে পরিণত হলে ইউরোপে নিকাববিরোধী আইনের তালিকায় যোগ দিবে পর্তুগালও। ইতোমধ্যে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস জনসমক্ষে বোরকা বা নিকাব পরা আংশিক বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

বিল উত্থাপনকারী চেগা পার্টির নেতা আন্দ্রে ভেনচুরা দাবি করেছেন, এটি নারীর স্বাধীনতা ও ইউরোপীয় মূল্যবোধ রক্ষার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তার ভাষায়, আজ আমরা আমাদের মেয়েদের বোরকা থেকে রক্ষা করেছি। 

অন্যদিকে বামপন্থি নারী আইনপ্রণেতারা বিলটির তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক।

এদিকে ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি আন্দ্রেয়া নেটো বলেন, এটি নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করার প্রশ্ন। কোনো নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুখ ঢেকে রাখতে বাধ্য করা উচিত নয়।

পর্তুগালের পার্লামেন্টে বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধের বিলটি পাস হলেও ১০টি দলের মধ্যে ২টি দল পিপল-অ্যানিমেলস-নেচার পার্টি এবং টুগেদার ফর দ্য পিপল পার্টি ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে। তাদের মতে, এই বিল বৈষম্য উসকে দেবে এবং সমাজে বিভাজন বাড়াবে।

বিলটি নিয়ে ইতোমধ্যে মানবাধিকার সংগঠন ও মুসলিম কমিউনিটিগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পর্তুগাল ধর্মীয় সহনশীলতার দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও এই সিদ্ধান্ত দেশটির সেই ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।