নির্বাচন পর্যন্ত যেভাবে চলবে দেশ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। তফসিল অনুযায়ী, আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ভোটের ফলাফলের সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত সময়কে বলা হয় ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’। এই সময়ে যে সরকার থাকবে তাদের কার্যক্রমে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে এবং ক্ষমতাও অনেক কমে আসবে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার স্থায়ীভাবে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে। পরে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিদ্যমান সরকারই দায়িত্ব পালন করে।
জানা গেছে, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক বা স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাবে। নির্বাচন-পূর্ব সময়ে সরকার কোনো নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না। একই সঙ্গে নতুন কোনো উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করবে না। এ ছাড়া বর্তমান মন্ত্রিসভায় থাকা তিন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম) নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের যেসব মন্ত্রী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা কমে আসবে। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে তারা কোনো প্রোটোকল পাবেন না।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীসহ ২৯ সদস্যের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এরমধ্যে ২১ জন মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ৭ জন। ওই মন্ত্রিসভায় মহাজোট সরকারের ১৬ মন্ত্রী ও ১৪ জন প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়েন। আর ২০১৮ সালের একদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যেহেতু তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এখন থেকে রুটিন কাজ করে যাবে। নির্বাচনকালীন সময়ে যে সরকার থাকে তারা পলিসি ডিসিশন নেয় না, যেন একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। তারা এমন কিছু করবে না, যা জনগণ সরকারকে ভোট দিতে আকৃষ্ট করে।
এর আগে, গত ৩১ অক্টোবর গণভবনে ব্রাসেলস সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তা জানান। তিনি বলেন, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও কানাডার মতো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার থাকে, সেভাবে চলবে। অর্থাৎ সেসময় আমরাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে রুটিন ওয়ার্ক পালন করব, যেন সরকার অচল হয়ে না যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী যখন নির্বাচনের সময় ঘোষণা হবে, তখন থেকে আর সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা মন্ত্রীরা ব্যবহার করতে পারবে না, পতাকা বা কোনো সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে না। তখন একজন প্রার্থী হিসেবেই তাদের ভোট চাইতে হবে।
এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো দায়িত্ব পালনে বা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবে। ৪৪(ঙ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনবোধে যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির ব্যবস্থা নিতে পারবে। ‘নির্বাচন কমিশন এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’ প্রয়োগ করতে পারবে।
এর আগে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সাত জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত।
যদিও নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও সমমনা কিছু দল। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। তবে সংবিধান অনুযায়ীই সবকিছু হচ্ছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি।
আগামী শনিবার থেকে নমিনেশন ফরম বিক্রি করবে আওয়ামী লীগ।