অত্যধিক পানি পান ভালো নাকি খারাপ?
সুস্থ শরীর, মসৃণ ত্বকের অন্যতম রহস্য হলো পানি। শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না পড়ে, তার জন্যও পানি পানের পরামর্শ দেন চারপাশের লোকজন। পানি পান অবশ্যই জরুরি। কিন্তু কোনও কিছুই বেশি ভালো নয়। পানি পানের ক্ষেত্রেও এ কথা কার্যকর। অত্যধিক পানি পানে মারাত্মক বিপদ নেমে আসতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘পানির নেশা’ সমস্যা হিসেবেই বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে অত্যধিক পানিপানের অভ্যাস থাকে রোগীর। এর ফলে রক্তে সোডিয়ামের ঘনত্ব পাতলা হয়ে আসে।
সোডিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট, যা কোষের ভেতরে এবং বাইরে তরলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। কিডনি থেকে যদি অতিরিক্ত পানির নিষ্কাশন না ঘটে, সেক্ষেত্রে ওই বাড়তি পানি কোষে প্রবেশ করে। এর ফলে কোষগুলো ফুলে যায়।
স্নায়ুর কার্যকারিতা, পেশির কার্যকারিতা এবং শরীরে তরল্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে সোডিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোডিয়ামের ঘনত্ব পাতলা হয়ে এলে, কোষগুলোর স্বাভাবিক ক্রিয়াকর্মও ব্যাহত হয়, যার প্রভাব পড়ে একাধিক অঙ্গের ওপর।
স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি ঘণ্টায় ০.৮ থেকে ১ লিটার পর্যন্ত পানি শোধন করতে পারে কিডনি। অল্প সময়ের মধ্যে এর চেয়ে বেশি পানিপান করলে পানিধারণ ক্ষমতায় প্রভাব পড়ে, পাতলা হয়ে যায় রক্ত।
শরীরে অত্যধিক পানি গেলে রক্তপ্রবাহের সঙ্গেও মিশে যায়। ইলেক্ট্রোলাইটের ঘনত্ব পাতলা হয়ে যায়। এর ফলে কোষের মধ্যে পানি ঢুকে যায়, যা ফুলে গিয়ে টিস্যুগুলোর ক্ষতি করে, প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কেও।
প্রাথমিক পর্যায়ে মাথার যন্ত্রণা, মাথা ভারী হয়ে আসা, খিঁচুনি হতে পারে। সমস্যা গুরুতর হলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
অনেক সময় অতিরিক্ত পানিপান করছি বলে বুঝতে পারি না আমরা। এক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, মাথার যন্ত্রণা, হঠাৎ করে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া, ক্লান্তি, পেশিতে যন্ত্রণা বা টান ধরলে, ঘন ঘন টয়লেটে ছুটতে হলে, হাত-পা, মুখ ফুলে গেলে সতর্ক হয়ে যান। একবারে অনেকটা পানিপানের পরিবর্তে বারে বারে, বেশ কিছুটা সময়ের ব্যবধানে পানিপান করুন।
সাধারণত পুরুষদের দিনে ৩.৭ লিটারের বেশি পানিপান করা উচিত নয়। অন্য পানীয়র মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা ২.৭ লিটার। সব ধরনের তরল এখানে গণ্য হবে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানিপানের সুপারিশ করেন চিকিৎসকরা, যা ৮-১২ গ্লাসের সমান। তবে যারা বেশি পরিশ্রম করেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে থাকেন, শুষ্ক পরিবেশে বসবাস করেন, তাদের বেশি পানিপান করা উচিত। তবে নিজে নিজে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।