নতুন এক ধরণের বিয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে জাপানে
যুব সমাজের মধ্যে বিয়ের অনীহাতে শীর্ষ দেশ জাপান। গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে এই পরবণতা বেড়েছে। তবে নতুন এক ধরনের সম্পর্ক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এশিয়ার এই দেশটিতে। ইংরেজিতে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রেন্ডশিপ ম্যারিজ’। দেশটির যুব সমাজের মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই প্রবণতা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সম্পর্কে জড়িতরা প্রেমে না পড়ে বা যৌন সম্পর্ক না গড়ে প্লেটনিক অংশীদার হয়ে উঠছে। জাপানের জনসংখ্যা ১২ কোটি ৪০ লাখ। তার মধ্যে শতকরা প্রায় এক ভাগ এমন সম্পর্ককে বেছে নিচ্ছে। অর্থাৎ এমন সম্পর্কে লিপ্ত মানুষের সংখ্যা হাজার হাজার। তারা অভিন্ন মূল্যবোধ এবং স্বার্থের ভিত্তিতে জড়াচ্ছে এ সম্পর্কে। তাদের মধ্যে অযৌন সম্পর্ক, সমকামিতা, বহুগামিতা।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একটি এজেন্সির নাম কালারাস। নতুন এই প্রবণতা সম্পর্কে ডাটা শেয়ার করেছে তারা। তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের মার্চ থেকে এই ধরনের বৈবাহিক সম্পর্কে যুক্ত হয়েছেন জাপানের ৫০০ মানুষ। তাদের আছে বসতি। এমনকি কোনও কোনও সম্পর্কে সন্তান লালন-পালন করছে।
ফ্রেন্ডশিপ ম্যারিজ আসলে কী?
ফ্রেন্ডশিপ ম্যারিজ হচ্ছে এমন একটি সম্পর্ক যেখানে অংশীদাররা আইনগতভাবে দম্পতি। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনও রোমান্টিক ভালোবাসা বা যৌন সম্পর্ক নেই। তারা একসঙ্গে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে পারেন। কৃত্রিম পদ্ধতিতে দম্পতিরা সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।
এই সম্পর্কে লিপ্ত দু’জন ব্যক্তি অবাধে অন্যদের সঙ্গে বিয়ে বাদে সম্পর্ক গড়তে পারেন। কারণ, এ বিষয়ে পারস্পরিক সমঝোতার চুক্তি থাকে। তিন বছর ধরে এমন সম্পর্কে লিপ্ত আছেন এমন একজন বলেছেন, ফ্রেন্ডশিপ ম্যারিজ হল- এমন একটি ব্যবস্থা যেমন একই স্বার্থে একজন রুমমেট খুঁজে নেওয়া। আমি কারও গার্লফ্রেন্ড হতে চাই না। কিন্তু আমি একজন ভালো বন্ধু হতে চাই। আমি এমন একজনকে চাই, যার সঙ্গে একই আনন্দ ভাগ করতে পারব। চ্যাট করতে পারব। হাসি-তামাশা করতে পারব।
ফ্রেন্ডলি ম্যারিজ কীভাবে কাজ করে? এই অ্যারেঞ্জমেন্ট প্রথাগত রোমান্টিক ভালোবাসা বা একজন বেস্টফ্রেন্ডকে বিয়ে করা নয়। পক্ষান্তরে এই ব্যবস্থার অধীনে দম্পতিরা বিয়ের আগে দেখা-সাক্ষাৎ করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি দিনের পর দিন দিন তাদের জীবন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। যেমন- তারা একসঙ্গে খাবার খেতে চায় কি না। কীভাবে তারা খরচ করবে। কে কাপড় লন্ড্রি করবে। কীভাবে রেফ্রিজারেটরের জন্য জায়গা বের করবে।
কালারাস বলেছে, এই সম্পর্ক রোমান্টিক না হলেও শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ এই সম্পর্কের দম্পতিরা একসঙ্গে সুখেই বসবাস করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই কিছু দম্পতির একসঙ্গে সন্তানও আছে।
কারা বেছে নিচ্ছেন এই প্রথা?
এই রীতিতে যারা আগ্রহী তাদের গড় বয়স ৩২.৫ বছর। জাতীয় গড়ের চেয়ে তাদের আয় বেশি। অযৌন সম্পর্কে লিপ্ত এবং সমকামিতায় লিপ্ত ব্যক্তিরাও এ সম্পর্কে জড়িত হচ্ছেন। তারা প্রচলিত বিয়ে থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। অনেক সমকামী আছেন, যারা প্রচলিত বিয়ে বা ভালোবাসার সম্পর্ক পছন্দ করেন না। তারা সামাজিক চাপে থাকেন। ফলে তারাও এখন এই প্রবণতাকে আলিঙ্গন করছেন। যদিও এই সম্পর্কের ইতি হচ্ছে বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে, তবে সুবিধা হল তারা পলিসি সুবিধা পাচ্ছে। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট