যেতে পারেন চায়ের দেশে
ধুলো-ধোঁয়ার শহর ছেড়ে স্বস্তির বাতাস নিতে চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল অনেকদিনের। ব্যস্ত দিনের ফাঁকে কখনো সময় মেলে তো সঙ্গী মেলে না, আবার কখনো সঙ্গী মেলে তো সময় মেলে না। এরই মধ্যে ব্যাটে-বলে মিলে যাওয়ায় স্থির হলো একদিনের জন্য শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের দিনক্ষণ।
সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলে যাতায়াতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের কাছাকাছি। তাই সক্কাল সক্কাল বের হওয়ার পরিকল্পনা করলাম। কারণ, যত আগে পৌঁছাতে পারব, তত বেশি ঘুরে দেখতে পারব। ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাতটা হবে, আমাদের চার চাকার পাইলট পলাশ ভাইয়ের ফোন। শীতের সকাল, তাই ঘুম থেকে উঠতে মন চাইছিল না।
শেষ পর্যন্ত অন্য ভ্রমণসংগীদের ফোন এ ঘুম থেকে উঠতেই হলো। ঘুম থেকে উঠেই ঝটপট তৈরি হয়ে নিলাম। চার চাকার বহন করে আমরা ছুটে চললাম শ্রীমঙ্গল পানে। আমার সঙ্গে ভ্রমণসঙ্গী হিসাবে আছে সৃজন, অনিক, অর্চি, কৃপা ও অর্পা। সকালবেলা তাই সবাই গাড়িতে উঠেই ঝিমুতে লাগল। সূর্য দেবকে সঙ্গী করে আমরা এগিয়ে চলছি মহাসড়ক পেরিয়ে।
সূর্য দেবের আভায় উষ্ণতা ছোঁয়ায় অন্য রকম লাগছিল। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা পৌঁছলাম শ্রীমঙ্গলে। আমাদের চার চাকার বাহন ছুটে চলছে দু’পাশের দুটি পাতার একটি কুঁড়ি আমাদের স্বাগতম জানাচ্ছিল।
আমরা এসে দাঁড়ালাম চা জাদুঘরের প্রবেশদ্বারে। জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকিট কিনে এগিয়ে চললাম। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে, সঙ্গে পাখিদের কিচিরমিচির বেশ ভালোই লাগছিল। আমরা পদব্রজে এগিয়ে চললাম। প্রথম কক্ষে আমরা প্রবেশ করলাম। প্রথমটিতেই রয়েছে চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহার করা সেই চেয়ার-টেবিল।
শূন্য চেয়ার-টেবিলের পেছনে টাঙানো সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা জাতির পিতার আপাদমস্তক প্রতিকৃতি। কক্ষটিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর চা পান করার ছবিসহ আরও বেশকিছু স্থিরচিত্র। বলে রাখা ভালো, ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি হিসাবে দেশের চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন।
বোর্ড চেয়ারম্যান থাকাকালীন চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল নন্দরানী চা-বাগান পরিদর্শনে আসেন বঙ্গবন্ধু। মিটিং করেন বাগান কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সেই মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু যে চেয়ারে বসেছিলেন, যে টেবিলটি তার সামনে রাখা ছিল, সেগুলো এখন দেশীয় চা শিল্পের ইতিহাসের অংশ হয়ে স্থান নিয়েছে শ্রীমঙ্গলের ‘টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়ামে’।
পাশের কক্ষেই দেখতে পেলাম চা গাছ ব্যবহার করে তৈরি করা আসবাবপত্রের। চা জাদুঘরের এ কক্ষটিতে আরও দেখতে পেলাম লালচান্দ চা-বাগান থেকে সংগৃহীত পুরোনো আমলের চা শুকানো যন্ত্রের অংশবিশেষ। কোদালা, বারোমাসিয়া ও কর্ণফুলী চা-বাগান থেকে সংগৃহীত চা-বাগানের আগাছা পরিষ্কার করার কাঁটা কোদাল, রিং কোদাল এ কক্ষেই সংরক্ষিত।
প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচি
চা জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেন ও বাসে চড়ে সিলেটের শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত বা কালনি এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ২২০ থেকে ১০০০ টাকা। চাইলে হানিফ, এনা, শ্যামলী এবং সিলেট এক্সপ্রেসের মতো বাসেও শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। শ্রীমঙ্গল থেকে ইজিবাইক বা অটোরিকশা নিয়ে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চা জাদুঘর ঘুরে আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
চা জাদুঘরের পাশেই রয়েছে চা-বাগানঘেঁষা আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন টি রিসোর্ট। অগ্রীম বুকিং দিয়ে এখানে থাকা যায়। এ ছাড়া কম খরচে রাতযাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলে হোটেল মেরিনা, টি হাউজ, রেস্ট হাউজ, প্যারাডাইস লজ, হোটেল মহসিন প্লাজা, হোটেল আল রহমানের মতো বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।
সূত্র : যুগান্তর/সুতা