স্বর্ণে এলার্জি? জেনে নিন প্রতিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫২ AM

বাঙালি নারীর সাজসজ্জার সঙ্গে গহনার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক পুরুষও স্বর্ণের গহনা পরিধান শুরু করেছেন। গহনার মধ্যে স্বর্ণ ও রূপার তৈরি অলঙ্কারের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। স্বর্ণ কারও কাছে মূল্যবান সম্পদ, আবার কারও কাছে কঠিন সময়ে নিরাপত্তার ভরসা। তাই যুগ যুগ ধরে নারীরা স্বর্ণের গয়না সংগ্রহ করে আসছেন।

তবে বর্তমানে স্বর্ণের দাম এতটাই বেড়েছে যে অনেকের পক্ষে তা কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। দাম ছাড়াও স্বর্ণ না পরার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ‘গোল্ড অ্যালার্জি’।

অনেকেই জানেন না, কারও কারও জন্য স্বর্ণ হতে পারে অস্বস্তি ও অ্যালার্জির কারণ। যেমন পরাগরেণু, ধুলা, পোষা প্রাণী বা খাবারে অ্যালার্জি হয়, তেমনি স্বর্ণের সংস্পর্শেও কারও কারও ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে।

২০০১ সালে নর্থ আমেরিকান কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস গ্রুপের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, চার হাজার ১০১ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে প্রায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের স্বর্ণতে  অ্যালার্জি ছিল। নারীদের মধ্যে এই হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা খাঁটি সোনা থেকে হয় না, বরং স্বর্ণ মিশ্রিত নিকেল বা অন্য কোনো ধাতুর কারণে এ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

কীভাবে বুঝবেন আপনার সোনায় অ্যালার্জি আছে কি না?

স্বর্ণের অ্যালার্জির লক্ষণ অন্য অ্যালার্জির মতোই। যেমন—

গয়না পরার স্থানে ফুলে যাওয়া
ত্বকে লালচে ভাব বা র‍্যাশ
গয়না পরার স্থানে ফুলে চুলকানি
চামড়া উঠে আসা
গয়না পরার স্থানে ফোসকা বা গাঢ় দাগ
খেয়াল করবেন, প্রতি বার সোনা পরার পর একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হলে এটি স্বর্ণে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

প্রতিকার কী?

যদি স্বর্ণ পরে চুলকানি, ফোলা বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়, তাহলে—

১. হালকা অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ওষুধে সমাধান আছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

২. তাৎক্ষণিকভাবে ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা কাপড় দিয়ে সেঁক নিলে আরাম মিলবে।

৩. ত্বক আর্দ্র রাখুন। শুষ্ক ত্বকে চুলকানির সমস্যা বেশি হয়।

৪. প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করলেও গুরুতর প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কী ধরনের গয়না পরবেন?

সম্ভব হলে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা ব্যবহার করুন।
হাইপোঅ্যালার্জেনিক বা নিকেল-ফ্রি গয়না ব্যবহার করুন।
বিকল্প হিসেবে টাইটানিয়াম বা স্টেইনলেস স্টিল গয়না বেছে নিতে পারেন।
ঘড়ির মেটাল স্ট্র্যাপের বদলে কাপড়, লেদার বা প্লাস্টিকের স্ট্র্যাপ ব্যবহার করুন।
নিয়মিত নিকেল বা সোনার সংস্পর্শে থাকলে গ্লাভস পরা অভ্যাস করুন।
কীভাবে বুঝবেন অ্যালার্জি আছে কিনা-

যদি সন্দেহ হয় আপনার অ্যালার্জি আছে, তাহলে একজন ডার্মাটোলজিস্ট বা অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে যান। সাধারণত তারা প্যাচ টেস্ট করে নিশ্চিত করেন, সত্যিই সোনা বা নিকেল অ্যালার্জি আছে কি না।

স্বর্ণের সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক হলেও, সবার জন্য এটি নিরাপদ নয়। স্বর্ণে অ্যালার্জি পুরোপুরি সারানো না গেলেও সচেতনতা ও সঠিক অভ্যাসের মাধ্যমে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই অ্যালার্জি থাকলে ঝুঁকি না নিয়ে বিকল্প গয়না ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্র: আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি, হেলথলাইন, মায়ো ক্লিনিক