সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগদানের অনুমোদন দিলো তুরস্ক
২০২২ সালে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ভয়ে এই আবেদন করে দেশটি। তবে গত এপ্রিলে ফিনল্যান্ড সবুজ সংকেত পেলেও তুরস্ক ও হাঙ্গেরির বাধায় সুইডেনের বিষয়টি ঝুলে ছিল। ২০ মাস ঝুলিয়ে রাখার পর এবার সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের অনুমোদন দিয়েছে তুরস্ক। খবর সিএনএন, ফক্স নিউজ, ও রয়টার্সের।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) তুর্কি সংসদে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে একটি বিল উত্থাপন করা হয়। এরপর এর ওপর ভোটাভুটি হলে ২৮৭-৫৫ ভোটে বিলটি পাস হয়। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল একে পার্টি, জাতীয়তাবাদী এমএইচপি জোট ও প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি ভোট দিয়েছে অনুমোদনের পক্ষে। তবে বিরোধী জাতীয়তাবাদী, কট্টর ইসলামপন্থী ও বাম দলগুলো বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে নতুন সদস্য যুক্ত করতে হলে আগের সব সদস্য দেশের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ফলে সদস্য দেশ হিসেবে তুরস্কের অনুমোদন ছাড়া ন্যাটোতে যোগ দিতে পারছিল না সুইডেন। মূলত সুইডেন সন্ত্রাসবাদীদের মদদ দেয়, এমন অভিযোগ তুলে ২০ মাস ধরে দেশটির সদস্যপদ আটকে রেখেছিল আঙ্কারা।
ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে কয়েক দশক ধরে নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন করে আসছিল সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। রাশিয়ার আগ্রাসনের ভয়ে ন্যাটো জোটের সদস্য হতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। গত এপ্রিলে ফিনল্যান্ড এ জোটের সদস্যপদ পেলেও নানা কারণ দেখিয়ে সুইডেনের সদস্যপদ আটকে রাখে তুরস্ক ও হাঙ্গেরি। এখন তুরস্ক আপত্তি তুলে নেওয়ায় সুইডেনের যোগদানের বিষয়টি হাঙ্গেরির ওপর নির্ভর করছে।
মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেফ ফ্লেক এক লিখিত বিবৃতিতে বলেছেন, আজ (গতকাল) ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের অনুমোদন দেওয়ার জন্য তুর্কি সংসদের সিদ্ধান্তকে আমি অত্যন্ত প্রশংসা করি। ন্যাটো জোটের প্রতি তুরস্কের প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবে আমাদের স্থায়ী অংশীদারিত্বের প্রমাণ দেয়।
সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রমও তুরস্কের সংসদের অনুমোদনকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমরা পাস হওয়া বিলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছি।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ তুরস্কের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, আমি হাঙ্গেরির ওপর ভরসা করছি। তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের জাতীয় অনুমোদন সম্পন্ন করবে।
তবে হাঙ্গেরির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত। হাঙ্গেরির অভিযোগ, সুইডেন তাদের দেশের বিরুদ্ধে বৈরী মনোভাব পোষণ করে। তবে সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা গেছে। মঙ্গলবার ভিক্টর অরবান সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনার জন্য বুদাপেস্টে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
তবে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রম বলেছেন, এই মুহুর্তে হাঙ্গেরির সঙ্গে সমঝোতার কোনো কারণ নেই। তবে দুই দেশের মধ্যে সংলাপ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।