গাজায় নৃশংসতার মাঝেই ইসরায়েলের কাছে ৪৫ হাজার গোলা বিক্রি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলি যুদ্ধ ট্যাংকের জন্য ৪৫ হাজার গোলা বিক্রি করতে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
এ বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ভয়েস অব আমেরিকা এবং রয়টার্সের প্রতিবেদনেও অনুরূপ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে কংগ্রেসের কাছে এই অনুরোধ করেছে পররাষ্ট্র দপ্তর। বর্তমানে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি ও উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটি পর্যালোচনা করছে। মূলত ইসরায়েলি মারকাভা ট্যাংকের জন্য এই ৪৫ হাজার গোলা চাওয়া হয়েছে। এই অনুরোধ দ্রুত পাস করতে কংগ্রেসের দুই কমিটিকে চাপ দিচ্ছে পররাষ্ট্র দপ্তর।
মার্কিন কংগ্রেসের কাছে এমন সময়ে এই আবেদন পাঠানো হয়েছে যখন ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের ওপর দেশি ও বিদেশি চাপ বাড়ছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, আমাদের নীতি হলো প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা সহায়তা বা বিক্রি নিয়ে যতক্ষণ না আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে অবহিত করা হয় ততক্ষণ এগুলো নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করি না।
নভেম্বরের শুরুতে ৩২০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বোমার সরঞ্জাম ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসকে অবহিত করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। অবশ্য কংগ্রেসকে জানানোর আগেই এ বিষয়ে খবর দিয়েছিল সিএনএন।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সামরিক সরঞ্জামবাহী ২০০ কার্গো প্লেন গেছে ইসরায়েলে। এসব সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে গোলা, সাঁজোয়া যান ও অন্যান্য অস্ত্র রয়েছে। তবে কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ সামরিক সহায়তা পেয়েছে, তা জানাতে অস্বীকার করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে সরাসরি তেমন কিছু প্রকাশ করে না।
এদিকে, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে আটকে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি।
ভোটাভুটির এ ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। অস্থায়ী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্থাপিত এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৫ সদস্যের পরিষদে, পক্ষে ভোট দেয় ১৩ দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য।
কিন্তু ‘ভেটো ক্ষমতাধর’ যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দেয়ায় ভেস্তে যায় প্রস্তাবটি। মুখে সংঘাত বন্ধের কথা বললেও, এ ঘটনার মাধ্যমে যুদ্ধ ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো দেশটি।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৮৭ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৭০ ভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় ৪৬ হাজার মানুষ। আহতদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। নেই গাজায় প্রায় ২৩ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা।