আকাশে উড়ল নাসার ‘নিঃশব্দ’ সুপারসনিক জেট
একসময় কেবল ভবিষ্যতের কল্পনা ছিল—সুপারসনিক জেট উড়বে, কিন্তু থাকবে না তীব্র ‘সনিক বুম’। সেই স্বপ্নই এবার বাস্তবের মুখ দেখল। নাসা ও লকহিড মার্টিনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি বিশেষ সুপারসনিক জেট এক্স-৫৯ প্রথমবারের মতো সফলভাবে উড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশে।
দীর্ঘ প্রায় দশ বছর গবেষণা ও উন্নয়নের পর মঙ্গলবার পামডেলের ইউএস এয়ার ফোর্স প্ল্যান্ট ৪২ থেকে উড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ডসে নাসার আর্মস্ট্রং ফ্লাইট রিসার্চ সেন্টারে পৌঁছায় পরীক্ষামূলক এ বিমানটি।
নাসার ভাষায়, এই বিমানই ভবিষ্যতের নীরব ও দ্রুতগামী আকাশযাত্রার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
‘কোয়ায়েট সুপারসনিক টেকনোলজি’ ব্যবহার করা এক্স-৫৯ উড়বে শব্দের গতির চেয়েও বেশি গতিতে, কিন্তু প্রচলিত সুপারসনিক জেটের মতো ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণধ্বনি তৈরি করবে না। ইঞ্জিনটি শরীরের ওপরে বসানো আর লম্বা সূচালো নাক—এই বিশেষ নকশাই কমাবে শব্দের তীব্রতা।
নাসা বলছে, মাটিতে থাকা মানুষরা যদি কোনো শব্দ শোনেও তা হবে ‘হালকা মৃদু ঠুকঠুক’—সুপারসনিক জেটের প্রচলিত ঝাঁকুনি তোলা শব্দ নয়।
সফল ‘মেইডেন ফ্লাইট’র পর এখন এক্স-৫৯ নিয়ে আরও বিস্তৃত পরীক্ষা চালাবে নাসা ও লকহিড মার্টিন। বিভিন্ন অঞ্চলে শব্দ পরিমাপ ও মানুষের প্রতিক্রিয়া যাচাই করাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য। এসব তথ্য ভবিষ্যতে স্থলভাগের ওপর দিয়ে সুপারসনিক উড়ান চালানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তৈরিতে সহায়তা করবে।
নিষিদ্ধ সুপারসনিক উড়ান—এবার মুক্তির পথে?
১৯৭৩ সালে শব্দদূষণ ও সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রে সুপারসনিক উড়ান নিষিদ্ধ হয়। কয়েক দশক পর সেই পথে পরিবর্তনের উদ্যোগ আসে। ২০২৫ সালের জুনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেন।
এ পরিস্থিতিতে এক্স-৫৯ প্রকল্প এখন শুধু গবেষণার বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক সুপারসনিক ভ্রমণের পথ উন্মুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ম্যাক ১-এর বেশি—ঘণ্টায় প্রায় ৭৬৮ মাইল গতিতে উড়ার সক্ষমতা রেখে এক্স-৫৯ দেখিয়ে দিল, শব্দ কমিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো আর কল্পনা নয়। নাসা–লকহিড মার্টিনের এই উদ্যোগ বাণিজ্যিক আকাশযাত্রায় নতুন যুগের ইঙ্গিত দিচ্ছে—যেখানে নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনে পৌঁছানোও হতে পারে কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার।