সেন্ট মার্টিন যেতে ঘাটে মাত্র ৪ জন পর্যটক এসেছিলেন!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক   নিজস্ব প্রতিবেদক  
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৮ PM

নানা বিধি-নিষেধের বেড়াজালে ১ নভেম্বর থেকে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও, কক্সবাজার থেকে একটিও জাহাজ ছাড়েনি। সকালজুড়ে শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ছিলো শুনশান নীরবতা, পর্যটকের আনাগোনাও ছিল না বললেই চলে।

সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সকালে মাত্র চারজন যাত্রী ঘাটে এসেছিলেন, পরে তারাও ফিরে যান।

তিনি বলেন, কক্সবাজার থেকে এত দীর্ঘ সমুদ্র পথে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার সিদ্ধান্তে পর্যটক পাওয়া যাবে না। এই বাস্তবতায় জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।

অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট মার্টিন রুটে বর্তমানে আটটি জাহাজ রয়েছে, যার নিয়মিত ধারণক্ষমতা তিন হাজার ৬০০ যাত্রী।

তবে সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাহাজ মালিকরা।

বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছতে সময় লাগে সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা; আসা-যাওয়ায় মোট ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। ফলে দ্বীপে এক ঘণ্টা অবস্থানের সুযোগে পর্যটকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে আগ্রহী পর্যটক প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন। কিন্তু একটি জাহাজ চালু রাখতে অন্তত ৩৫০ যাত্রী দরকার। একবার যাত্রায় খরচ পড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তাই কম যাত্রী নিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।

অন্যদিকে, উখিয়ার ইনানী জেটি ব্যবহার করা গেলে সময় কমে আট থেকে নয় ঘণ্টায় নামানো যেত। কিন্তু পরিবেশগত কারণে সে পথে অনুমতি নেই। টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকেও সময় বাঁচানো সম্ভব হলেও মিয়ানমারের সীমান্ত সংঘাত ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে সেটি কার্যকর নয়।

সব মিলিয়ে, শর্তের কড়াকড়ি, উচ্চ খরচ ও নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তায় নভেম্বরে সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চালাতে রাজি নন মালিকরা।

তারা বলছেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় বাস্তবতা বিবেচনা না করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। দ্বীপের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশায় আছে- তাই এসব নির্দেশনা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।

সেন্ট মার্টিনের রিসোর্ট ব্যবসায়ী নুরুল হাসানের ভাষায়, “আমরা চাই, পরিবেশ বাঁচুক, কিন্তু সিদ্ধান্তটা বাস্তবসম্মত হতে হবে। ১৫ ঘণ্টা সমুদ্রযাত্রা করে কেউ এক ঘণ্টা দ্বীপে থেকে ফিরে আসবে না। এতে পর্যটন তো নয়, বরং ক্ষতি।”

ঢাকা থেকে আসা দম্পতি তামান্না ও রুবেল হোসেন বলেন, আমরা ছুটি নিয়ে এসেছিলাম সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য। কিন্তু শুনলাম কোনো জাহাজ যাচ্ছে না। এত দূর থেকে এসে খালি হাতে ফিরতে হবে, ভাবতেই খারাপ লাগছে।

কক্সবাজার ঘুরতে আসা চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইফাজ উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিনে রাত কাটানোই মূল আনন্দ। দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়মে সেই স্বাদই হারিয়ে যাবে। সরকার যদি অন্তত সপ্তাহে দুদিন রাত্রিযাপনের সুযোগ দিতো, তাহলে পর্যটকরাও যেত, ব্যবসার চাকা ঘুরত।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান জানান, সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহনের জন্য ছয়টি জাহাজকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়েব পোর্টাল চালু হয়েছে, টিকিট বিক্রিও শুরু হয়েছে। যাত্রীর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে মালিকপক্ষ যেকোনো সময় জাহাজ চালু করতে পারবে।

২২ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তর জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচল করা যাবে, তবে রাত্রীযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করতে পারবেন। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে প্রথম দিনেই সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি, জাহাজ ছাড়েনি একটিও, ঘাটে ছিলো নিঃশব্দ নিরবতা।

সেন্ট মার্টিনের সামনে আরেকটি 'হতাশার মৌসুম'