পাকিস্তানে ভয়াবহ সংঘর্ষ, নিহত ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৭ PM

পাকিস্তানের লাহোরে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। সোমবার পাঞ্জাব প্রদেশে এ সহিংসতার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো, যার মধ্যে রয়েছে বার্তা সংস্থা এপি ও পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন।

পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শক উসমান আনোয়ার জানান, বিক্ষোভকারীরাই প্রথমে পুলিশের দিকে গুলি চালায়। এতে এক কর্মকর্তা নিহত ও কয়েকজন আহত হন। পরে পাল্টা সংঘর্ষে তিনজন বিক্ষোভকারী এবং এক পথচারী নিহত হয়।

রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) এই মিছিলের আয়োজন করে। দলটির দাবি, তাদের শতাধিক সমর্থক আহত হয়েছে এবং নিহতের সংখ্যা সরকারের দাবির চেয়ে আরও অনেক বেশি।

আজ সোমবার টিএলপি প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি ট্রাকে দলটির কয়েকজন নেতা ছিলেন, যাঁরা শুক্রবার লাহোর থেকে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের লংমার্চ থেকে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর আগে শনিবারের এক বিক্ষোভে পুলিশ ১০০ জনের বেশি টিএলপি সমর্থককে গ্রেপ্তার করে।

আজ যখন সংঘর্ষ শুরু হয়, তখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বসানো কনটেইনার সরিয়ে সড়ক খুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। লাহোরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর তারা শহরের উপকণ্ঠের মুরিদকে এলাকায় অবস্থান নেয় এবং পরে পুনরায় রাজধানীর দিকে যাত্রা শুরু করে।

এর আগে আজ সোমবার ভোরে টিএলপির নেতা সাদ রিজভী একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি বন্ধ করার আহ্বান জানান এবং আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তাঁর বক্তব্যের সময় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

টিএলপি জানায়, সাদ রিজভীও সোমবারের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। তবে তাঁর অবস্থান জানা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁকে এবং অন্যান্য নেতাকে খুঁজে বের করতে অভিযান চলছে।

পুলিশপ্রধান উসমান আনোয়ার বলেন, বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে পুলিশ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ‘আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব নিচ্ছি,’ বলেন তিনি। তবে অনেকে পাকিস্তান সরকারের কঠোর পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন; বিশেষ করে বিক্ষোভ শুরুর আগেই প্রধান সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কারণে।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস গত সপ্তাহে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে সম্ভাব্য অস্থিরতার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছিল।

টিএলপি পাকিস্তানে বিতর্কিত একটি ইসলামপন্থী দল, যারা প্রায়ই সহিংস বিক্ষোভের জন্য পরিচিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে টিএলপি আলোচনায় আসে দেশের ধর্ম অবমাননা আইনের (ব্লাসফেমি আইন) পক্ষে প্রচার চালিয়ে। এরপর থেকে দলটি বেশ কয়েকবার সহিংস বিক্ষোভ করেছে, বিশেষত বিদেশে কোরআন অবমাননার ঘটনায়।

টিএলপি অতীতেও লাহোরসহ বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে। এবার দলটির লক্ষ্য ছিল ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনে গিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানানো।