কৃমির ঔষধ খাওয়া ভালো: তিন মাস পর পর
এই লিখায় আমরা কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেব। সাধারণ আমরা অবহেলা করে নিয়মিত কৃমির ঔষধ খাই না। প্রয়োজন একটু সচেতনতা। তাহলে নানাবিধ অসুখ-বিসুখ থেকে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
কৃমি কি
কৃমি হচ্ছে মানবদেহের অন্ত্রে বসবাসকারী একধরণের পরজীবি। অন্ত্র থেকে রক্ত চুষে খেয়ে কৃমি বেঁচে থাকে। কৃমি যে পরিমাণ রক্ত চুষে খেতে পারে তা আপনি অনুমানও করতে পারবেন না। কৃমি যদি দূর করা না হয়, তাহলে রক্তহীনতার মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কৃমির ঔষধ আলবেন ডিএস হচ্ছে এই রক্তচোষা পরজীবি নির্মূল করার কার্যকর ট্যাবলেট। এই কৃমির ওষুধ আলবেন ডিএস খাওয়ার নিয়ম, কৃমি যেন বাসা বাঁধতে না পারে তার জন্য করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে।
কৃমি যেভাবে হতে পারে
কৃমি মানুষ সহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্ত্রের শত্রু। কৃমির জন্য প্রাণীর এমনকি শিশুর মৃতুর ঘটনাও ঘটে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ যে কারও হতে পারে এই পরজীবি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, অস্বাস্থ্যকর খাবার, শৌচ কাজ শেষে ঠিকমতো হাত না ধোয়া, নখ দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে কাটা, নখ বড় হলে না কাটা এই কারণগুলোর জন্যই মানুষের অন্ত্রে কৃমি বাসা বাঁধে।
ফিতাকৃমি, সূতাকৃমি, কেঁচোকৃমি, গোলকৃমি হচ্ছে কৃমির কয়েকটি সাধারণ জাত। অন্ত্র থেকে কৃমি দৈনিক ২ মিলিলিটারেরও অধিক পরিমাণ রক্ত চুষে নিতে পারে। এই পরজীবির জন্য ছোট, বড় সবার মধ্যেই রক্তহীনতা বা রক্তস্বল্পতা, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা যেমন- বদহজম ও পেটফাঁপা, অপুষ্টির মতো জটিল সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি অ্যালার্জি, কাশি, শ্বাসকার্যে কষ্ট হওয়ার উপক্রমও হতে পারে। তাই কৃমি দূর করার জন্য যত তাড়াতাড়ি পারা যায় কৃমিনাশক ওষুধ নিতে হবে।
ঔষধ ও প্রতিকার
আলবেন ডিএস (Alben Ds) তথা আলবেনডাজল হচ্ছে কৃমি দূর করার জন্য কার্যকর একটি ওষুধ। অন্ত্র থেকে কৃমিরা বেঁচে থাকার জন্য রক্ত ও গ্লুকোজ নিয়ে থাকে। আলবেন ডিএস কৃমিদের এই রক্ত ও গ্লুকোজ নেয়ার কাজে বাঁধা দেয়। বাঁধা পেয়ে কৃমিরা বেঁচে থাকার অবলম্বন গ্রহণ করতে পারে না। ফলে কৃমি দ্রুত মারা যায়।
কৃমির ওষুধ আলবেন ডিএস খাওয়ার নিয়ম
এসকেএফ (এসকায়েফ) ওষুধ কোম্পানির প্রস্তুত করা এই কৃমিনাশক ওষুধটি ট্যাবলেট আকারে ওষুধের দোকানগুলোতে পাওয়া যায়। ট্যাবলেটটি দুই প্রকার। ৪০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেটটি বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা ৫ বছরের উপরের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের দেয়া হয়। আরেকটি প্রকার হচ্ছে ২০০ মিলিগ্রাম সাসপেনশন যা মূলত ১-৫ বছরের শিশুদের দেয়া হয়।
সেবন বিধিঃ
প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো বয়সী নারী ও পুরুষের জন্য আলবেন ডিএস ৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটটি ১৪ দিনে মোট ২ ডোজ নিতে হয়। প্রথম ৭ দিনে একটি ও পরের ৭ দিনে একটি ট্যাবলেট নিয়ে মোট ২ ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে। খালিপেটে অথবা খাবারের পর খেতে পারা যাবে, তবে খাবারের পর এই ট্যাবলেট খাওয়ার কার্যকারিতা বেশি দেখা গিয়েছে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক ও ১ বছর থেকে ৫ বছরের মাঝামাঝি বয়সী শিশুদেরকে ২০০ মিলিগ্রামের ওষুধটিও ১৪ দিনে মোট ২ ডোজ নিতে হবে।
কয়েক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করার পর যদি কৃমি দূর না হয়, তাহলে পুনরায় একইভাবে কৃমির ওষুধ নিতে হবে।
অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ও ওষুধের সাথে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
আলবেন ডিএস যাদের জন্য নয়
- নবজাতক ও ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের এই কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
- গর্ভবতী মহিলা ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য এই ওষুধ প্রযোজ্য নয়।
- কিডনিজনিত ও হার্টজনিত সমস্যা আছে এমন রোগীদের জন্যও আলবেন ডিএস প্রযোজ্য নয়।
এই ওষুধ নেয়ার আগে ডাক্তারকে আপনার শারীরিক অবস্থার কথা জানাবেন এবং সে সময় অন্য কোনো খেতে হয় কি-না সেটাও বলবেন। তারপর ডাক্তার আপনার জন্য উপযোগী কৃমির ওষুধ দিবে।
কৃমির ওষুধ আলবেন ডিএস এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- তন্দ্রাচ্ছন্নতা।
- বমি অথবা বমিবমি ভাব হতে পারে। তবে খুবই বিরল ঘটনা এটি।
- হালকা মাথা ব্যথা অথবা মাথাঘোরানো হতে পারে।
- খাওয়ায় অরুচি ও খিদে না থাকা।
এগুলো সবার মধ্যেই হয় না। এগুলো হওয়ার ঘটনাও তেমন দেখা যায় না। এটি সাধারণ একটি কৃমির ওষুধ, তাই ক্ষতিকর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।
কৃমি যাতে না হয় তার জন্য করণীয়
- শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক, ঘরবাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে ও টয়লেট পরিষ্কার রাখতে হবে।
- বাসি, পঁচা খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পাওয়া না গেলে পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে নিতে হবে।
- নিয়মিত নখ কাটতে হবে। দাঁত দিয়ে নখ কাটার বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
- প্রতিবার টয়লেট করার পর সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- অপরিষ্কার হাতে খাবার খাওয়া ও খাবার পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
গ্রাম ও শহর - সব জায়গার মানুষের জন্যই এই করণীয়গুলো মেনে চলুন।
শেষে বলা যায় :
কৃমি সাধারণ একটি সমস্যা হলেও, কারও কারও ক্ষেত্রে এটি বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই কৃমির ওষুধ আলবেন ডিএস ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করুন। কৃমি যেন না হয় তার জন্য উপরোক্ত করণীয়গুলো মেনে জীবনযাপন করুন।