আজ ৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ক্যান্সার দিবস
আজ ৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালিত হয়। বিশ্ব জুড়ে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান রোগে পরিণত হয়েছে। উন্নত-আধুনিক দেশ থেকে পিছিয়ে পড়া কোনো দেশই এর বাইরে নয়। প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে।
ডব্লিউএইচওর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে আনুমানিক ৯.৭ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারে মারা গেছে। ডব্লিউএইচও ১১৫টি দেশের সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা গেছে বেশিরভাগ দেশ সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের অংশ হিসেবে ক্যানসার এবং এর পরিষেবাকে পর্যাপ্তভাবে অর্থায়ন করে না। আইএআরসি এর গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরির নতুন তথ্যে দেখা গেছে যে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী যারা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ও মারা গেছেন তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ১০ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
নতুনভাবে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বব্যাপী ২.৫ মিলিয়ন, যা সবচেয়ে বেশি। এরপরে ২.৩ মিলিয়ন স্তন ক্যানসার, ১.৯ মিলিয়ন কোলোরেক্টাল ক্যানসার, ১.৫ মিলিয়ন প্রোস্টেট এবং ৯ লাখ ৭০ হাজার মানুষ পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া ফুসফুসের ক্যানসারে ১.৮ মিলিয়ন, কোলোরেক্টাল ক্যানসারে ৯ লাখ, লিভার ক্যানসারে ৭ লাখ ৬০ হাজার, স্তন ক্যানসারে ৬ লাখ ৭০ হাজার এবং পাকস্থলীর ক্যানসারে ৬ লাখ ৬০ হাজার জন মারা গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষ করে সাড়ে ১০ কোটি নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সচেতনতা এবং সুষ্ঠু জীবনযাত্রা দিয়ে একটি বড় অংশের ক্ষেত্রে ঠেকিয়ে রাখা যায় এ মারণরোগ। তাই ক্যান্সার নিয়ে আশঙ্কার বদলে সচেতনতার প্রসার বেশি জরুরি। আর সেই কারণেই, প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।
চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নির্ভর করে ক্যান্সারটি কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটি কাছাকাছি কোনো অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করে। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথমে আসে ১৯৯৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। ২০০০ সালে প্যারিসে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দিবসটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল নামের একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে পালন করা হয়।
দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা।
দিবসটি উপলক্ষে আজ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, বাংলাদেশ ক্যান্সার ফাউন্ডেশনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে শোভাযাত্রা, ক্যান্সারবিষয়ক পোস্টার ও ফেস্টুন প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, ক্যান্সার রোগী ও সারভাইবারদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্যতম।
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ২০৫০ সালে দেশে ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ১৮৫টি দেশ এবং ৩৬ ধরনের ক্যানসারের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে, খাদ্যনালী, ঠোঁট, ওরাল ক্যাভিটি এবং ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি।
ডব্লিউএইচও আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ২০৫০ সালে সারা বিশ্বে ক্যানসারে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যা ২০২২ সালের সংখ্যার তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি।ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) একটি সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সংস্থাটি বলছে, প্রায় পাঁচজনের মধ্যে একজন তাদের জীবদ্দশায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া প্রতি নয়জন পুরুষের মধ্যে একজন এবং ১২ জন নারীর মধ্যে একজন ক্যানসারে মারা যায়।
গবেষণায় তামাক, অ্যালকোহল, স্থূলতা এবং বায়ু দূষণকে বিশ্বব্যাপী ক্যানসার রোগীর বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দেশের চিকিৎসকরা বলছেন, পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রকোপ বেশি এবং নারীদের মধ্যে স্তন ও জরায়ুর ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আগামীকাল বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালন করা হবে। তবে বাংলাদেশে এই রোগের কোনো জাতীয় তথ্য নেই।