তামাক ব্যবহার নিয়ে উঠে এল ভয়াবহ চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৭:২৬ PM

ভাবুন, একটি পরিবার—যার কর্তা হৃদরোগে মারা গেছেন। আয়ের মূল অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা এই পরিবার, আর সেই মৃত্যুর পেছনে ছিল তামাক সেবনের অভ্যাস। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। তামাকজনিত রোগে প্রতি বছরই লাখো পরিবার এমন অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘জনস্বার্থ বনাম তামাক কোম্পানির প্রভাব: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ত্বরান্বিতকরণে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় উঠে এসেছে এমনই এক ভয়াবহ চিত্র।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী জানান, দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। এছাড়া ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। হৃদরোগ, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয় তামাককেই। প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন।

বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করা জরুরি। কিন্তু সরকার ‘স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের’ নামে তামাক কোম্পানির মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এসময় সরকার নানা অজুহাতে গড়িমসি করছে বলে দাবি করেন তিনি।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা বলেন, ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী তামাক কোম্পানিকে নীতি প্রণয়ন বা সংশোধন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যাবে না। অথচ ১৩ জুলাই উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে খসড়া সংশোধনী নিয়ে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী।

এসময় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬টি সংশোধনী প্রস্তাব দেয়া হয় সভা থেকে। এর মধ্যে রয়েছে — ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বাতিল করে শতভাগ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহন ধূমপানমুক্ত করা। তামাক বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটসহ নতুন তামাকজাত পণ্যে কিশোর ও তরুণদের প্রবেশ রোধ করা। প্যাকেট ও কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও মোড়কবিহীন ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি নিষিদ্ধ করা।