সাদা পাথর এলাকায় দুদকের অভিযান

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের বিখ্যাত সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে পাথর লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে দুদক সিলেট কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করে।
এদিকে, পাথর লুটপাটের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। অপরদিকে, বিকেলে জেলা প্রশাসন বালু ও পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে অভিযান চালায়। এ সময় পাথর বহনকারী একাধিক নৌকা ভেঙে ফেলা হয় এবং পাথর উত্তোলনের যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ আজকের পত্রিকাকে জানান, সাদা পাথরের পাথর ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার কমিটি গঠন করা হয়। এই তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি আগামী রোববারের ভেতরে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে। কমিটিতে প্রধান হিসেবে থাকবেন একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বিভিন্ন সুপারিশমালা।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘সিলেটের সাদা পাথরে আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়। আমাদের ব্যাকআপ যেগুলো রয়েছে; যেমন, ক্রাশার মিল অপসারণ, ক্রাশার মিল থেকে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম আমাদের অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমাদের কার্যক্রমের বিষয়ে দেখা গেছে, এক জায়গায় কিছুটা বিচ্যুতি ঘটলেও অন্য জায়গায় আমাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমাদের অভিযান নিয়মিত চলবে।’
এদিকে আজ দুপুরে দুদক সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাফি মোহাম্মদ নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি দল সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শনে যায়। পরে সেখানে স্থানীয় প্রশাসন, জনসাধারণের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তারা। পরিদর্শক দল জানায়, কারা এই লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, তা অনুসন্ধানেই তাদের এই পরিদর্শন। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে লুটপাট হতে পারে বলে ধারণা করছে দুদক। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণও তারা অনুসন্ধান করছে।
দুদক সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাথর লুটের সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন এই লুটের সঙ্গে কারা জড়িত, প্রশাসন কেন নীরব ছিল, প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে কি না এবং লুট করা পাথর কোথায় নেওয়া হয়েছে, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পরিদর্শনকালে স্থানীয় ব্যক্তিরা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সবকিছু নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া যাবে, বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সাদা পাথরের পাথর লুটপাট শুরু হয়। গত ১৫ দিনেই একেবারে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে সাদা পাথরকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ সময়ে শতকোটি টাকার পাথর লুটে নেওয়া হয়েছে। কেবল পাথর নয়, নদীতীরের বালি ও মাটি খুঁড়েও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে সাদা পাথরসহ সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। আজ বিকেলে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাপা সিলেট শাখার আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘সিলেটের গর্ব, দেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি স্পট থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। আজ যদি পাথর লুটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে অন্য স্পটগুলোর একই পরিণতি হতে পারে। যা আরও উদ্বেগের বিষয়। মাত্র কয়েক মাসে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবাধে ও পরিকল্পিতভাবে এসব পর্যটন স্পট থেকে শত শত কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট করে নিয়ে গেছে। এটি শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ লুট নয়, এটি আমাদের পরিবেশ, আমাদের অর্থনীতি ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকারের ওপর নির্মম আঘাত।’
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাপা সিলেটের সভাপতি জামিল আহমেদ চৌধুরী। শুরুতেই সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাপা সিলেটের সহসভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাপা সিলেটের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ সমিতি সিলেটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোজাক্কির হোসেন কামালী, বাপা সিলেটের সহসভাপতি অধ্যক্ষ ভাস্কর রঞ্জন দাস, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহাদাত চৌধুরী প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে বাপা সিলেটের নেতারা সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শের মাহবুব মুরাদের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।