উড়তে থাকা হায়দ্রাবাদকে ৭৮ রানে পরাজিত করলেন মোস্তাফিজের চেন্নাই
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ৭৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে মোস্তাফিজের চেন্নাই সুপার কিংস। আগে ব্যাট করতে নেমে দলীয় অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের অনবদ্য ৯৮ রানের ইনিংসের সঙ্গে ড্যারেল মিচেলের ফিফটিতে ৩ উইকেট হারিয়ে ২১২ রানের বড় সংগ্রহ পায় চেন্নাই। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে একদমই সুবিধা করতে পারেনি হায়দ্রাবাদ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে এবারের আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দলটি। তুষার দেশপান্ডে, মোস্তাফিজুর রহমান ও মাথিশা পাথিরানার বোলিং তোপে ৭ বল বাকি থাকতেই ১৩৪ রানেই গুটিয়ে যায় দলটি। ফলে টানা দুই হারের পর জয়ে ফিরেছে মোস্তাফিজের চেন্নাই।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) চিপকের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টসে হেরে চেন্নাইকে আগে ব্যাট করতে পাঠান হায়দরাবাদ অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ব্যাটিংয়ে নেমে প্রত্যাশামাফিক শুরু পায়নি চেন্নাই। ধীর গতির শুরুর পর দলীয় ১৯ রানেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার আজিঙ্কা রাহানে। এরপর ওপেনার অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের সঙ্গে যোগ দেন কিউই ব্যাটার ড্যারিল মিচেল। দু’জনে মিলে শুরুর বিপর্যয় সামাল দিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন। তাদের ১২৬ রানের রেকর্ড জুটির পথে ঝড় তুলেন মিচেল। তিনি ৩২ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে সজঘরে ফেরেন।
তার ইনিংস জুড়ে ছিল একটি চার ও চারটি ছক্কা। মিচেল ঝড়ো ব্যাটিং করার সময় একপ্রান্ত আগলে ছিলেন রুতুরাজ। তিনি ২৭ বলে পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। এরপর রুতুরাজের সঙ্গে যোগ দেন শিভম দুবে। উইকেটে এসেই মারমুখী হন চেন্নাইয়ের এই ব্যাটারও।সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন চেন্নাই অধিনায়ক। তিনি ৫৮ বলে ৯৮ রান করে দুই রানের আক্ষেপে পুড়েছেন। থাঙ্গারাসু নাটারাজনের বলে তিনি শাহবাজ খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। এরপর রবীন্দ্র জাদেজা-মঈন আলীদের অপেক্ষায় রেখে ব্যাটিং করতে নামেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকানো ধোনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২ বলে ৫ রান করে। দুবে ২০ বলে ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। হায়দরাবাদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন নাটারাজন, ভুবনেশ্বর কুমার ও জয়দেব উনাদকাট।
২১৩ রানের লক্ষ্য দিয়ে সেই কাজটা বেশ ভালোভাবেই করেছেন তুষার দেশপান্ডে। নিজের প্রথম ওভারেই ট্রাভিস হেড ও আনমলপ্রীত সিংকে ফিরিয়ে চেন্নাই শিবিরে স্বস্তি নিয়ে আসেন চেন্নাইয়ের এই পেসার। তার প্রথম বলেই ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মেরেছিলেন হেড। এক বল পর ডিপ মিড উইকেট দিয়ে আরেকটি ছক্কা। পঞ্চম বলেও চড়াও হয়েছিলেন হেড। দেশপান্ডের বলে কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যাটে বলে করতে পারেননি। বল চলে যায় ডিপ পয়েন্টে। সেখানে সহজ ক্যাচ নেন মিচেল।
পরের বলে আনমলপ্রীত ক্যাচ দিয়েছেন কাভারে মঈন আলীর হাতে। দেশপান্ডে নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে আরেক ওপেনার অভিষেককেও আউট করেছেন। ৯ বলে ১৫ রান করা এই ব্যাটার ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন মিচেলকে। ফলে ৪০ রানেই ৩ উইকেট হারায় হায়দরাবাদ।
এরপর নীতিশ রেড্ডিকে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। ১৫ বলে ১৫ করা এই ব্যাটার রবীন্দ্র জাদেজার বলে টপ এজ হয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে ক্যাচ দেন। পঞ্চম উইকেটে হায়দরাবাদের কিছুটা হাল ধরেছিলেন এইডেন মার্করাম ও হেইনরিখ ক্লাসেন। ২৬ বলে ৩২ রান করা মার্করামকে দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন মাথিশা পাথিরানা। ক্লাসেনকেও ফেরান এই লঙ্কান পেসার। আবারও বোলিং আক্রমণে ফিরে নিজের পঞ্চম বলে ক্লাসেনকে বড় শট খেলতে প্রলুব্ধ করে লং অনে মিচেলের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন পাথিরানা। ফলে ২১ বলে ২০ রানে শেষ হয় এই প্রোটিয়া ব্যাটারের ইনিংস।
শেষদিকে আব্দুস সামাদকে নিজের শিকার বানান শার্দুল ঠাকুর। দেশপান্ডে নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে ফেরান প্যাট কামিন্সকে। মোস্তাফিজুর রহমানও এদিন দারুণ বোলিং করেন। প্রথম ওভারে ৮ রান দিলেও দ্বিতীয় ওভারে তিনি খরচা করেছিলেন মাত্র ৫ রান। নিজের তৃতীয় ও ইনিংসে ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই চার খেয়েছিলেন মোস্তাফিজ। অবশ্য পরের বলেই শাহবাজ আহমেদকে মিচেলের ক্যাচ বানান কাটার মাস্টার। এরপর পঞ্চম বলে জয়দেব উনাদকাটকে ফিরিয়ে হায়দরাবাদের ইনিংস গুঁড়িয়ে দেন মোস্তাফিজ।
হায়দরবাদের ইনিংস থেমেছে ১৩৪ রানে। চেন্নাই জিতেছে ৭৮ রানের বড় ব্যবধানে। মাত্র ২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে চেন্নাইয়ের সেরা বোলার দেশপান্ডে। মুস্তাফিজ ১৯ ও পাথিরানা ১৭ রান দিয়ে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। এই জয়ের ফলে ৯ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে চেন্নাই।