অল্প পুঁজিতেও রিশাদ ঝড়ে বাংলাদেশের জয়
-1180940.jpg?v=1.1)
আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই টাইগারদের সামনে এসে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যালেঞ্জ। অনুশীলনের তেমন সময় না পেয়েই তিন দিনের মাথায় নতুন সিরিজে মাঠে নামতে হয় দলকে। তবে ঘরের মাঠে ফিরেই জয় দিয়ে হারার বৃত্ত ভেঙেছে মেহেদি হাসান মিরাজের দল। মিরপুরে ৭৪ রানের দারুণ জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ রানে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রান আসে তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ৪৬ রান।
জয়ের জন্য ২০৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুর্দান্ত সূচনা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উদ্বোধনী জুটিতে তারা তোলে ৫১ রান। তবে ২৭ রান করা আলিক আথানজেকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে প্রথম সাফল্য এনে দেন রিশাদ হোসেন। সেই আঘাতের পরই প্রতিপক্ষের রানের গতি আটকে দেয় বাংলাদেশ।
তিন নম্বরে নেমে ধীরে-সুস্থে খেলতে থাকেন কেসি কার্টি। কিন্তু ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন তিনি। ২০তম ওভারে রিশাদের বলে স্লিপে সাইফ হাসানের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৩০ বল খেলে কার্টির সংগ্রহ মাত্র ৯ রান। ৩৯ ওভারেই ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নিজের পরের ওভারে ফিরে আরো দুই উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যান্ডন কিংয়ের ব্যাট ছুঁয়ে যায়। উইকেটকিপার সোহান দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় বল গ্লাভসবন্দি করেন। কিং ৬০ বলে করেছেন ৪৪ রান। চতুর্থ বলে ফিরিয়েছেন শারেফান রাদারফোর্ডকে। সোহানের গ্লাভসবন্দি হয়ে ডাক খেয়েছেন তিনি।
২৪তম ওভারে আবারো উইকেটের দেখা পান রিশাদ। এবার তার শিকার রোস্টন চেজ। ৬ রান করে চেজ ফিরলে ৯২ রানেই পঞ্চম উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। আর এই ৫ উইকেটের সবকটি গেছে রিশাদের ঝুলিতে। এটি তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। বাংলাদেশের প্রথম ডানহাতি স্পিনার হিসেবেও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেয়েছেন রিশাদ।
একশর আগেই ৫ উইকেট হারানো উইন্ডিজ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। রোস্টন চেজ-গুড়াকেশ মোতিরা চেষ্টা করেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
উইন্ডিজের ইনিংসে শেষ পেরেক মারেন রিশাদ। ৩৯তম ওভারে বোলিংয়ে ফেরেন এই লেগি। তার শেষ বলে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন জেডন সিলস। এই উইকেটসহ ম্যাচে ৬ উইকেট পেয়েছেন তিনি। যা তার ক্যারিয়ার সেরা। একই সঙ্গে কোনো বাংলাদেশি স্পিনারেরও ওয়ানডেতে সেরা বোলিং ফিগার এটি।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারিসহ ৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই শুরু বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। দ্বিতীয় ওভারেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন সাইফ হাসান। ইনফর্ম এই ওপেনার ৬ বল খেলে ৩ রানের বেশি করতে পারেননি।
পরের ওভারেই ফিরেছেন সৌম্য সরকারও। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন জেইডেন সিলস। সেখানে জায়গায় দাঁড়িয়ে কভার পয়েন্টের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য। টাইমিং না হওয়ায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রোস্টন চেজের হাতে ধরা পড়েন। এই ওপেনারের ব্যাট থেকে এক চারে ৬ বলে ৪ রান এসেছে।
৮ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ৭১ রান। ৩২ রান করে শান্ত ফিরলে ভাঙে সেই জুটি।
শান্ত থিতু হয়ে ফিরলেও ব্যক্তিগত ফিফটি পেয়েছেন হৃদয়। এই মাইলফলক ছুঁতে ৮৭ বল খেলেছেন তিনি। কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও উইকেট বিবেচনায় হৃদয়ের এই ইনিংস কার্যকরী ছিল। ফিফটির পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সবমিলিয়ে ৯০ বলে করেছেন ৫১ রান।
হৃদয়ের পর দায়িত্ব নিয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেছেন অঙ্কন। অভিষিক্ত এই উইকেটকিপার ব্যাটার ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে আউট হয়েছেন। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে রোস্টন চেইজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। তার আগে ৭৬ বলে করেছেন ৪৬ রান।
অঙ্কন ফেরার পর দুইশ স্পর্শ করা নিয়েও শঙ্কা জেগেছিল। তবে শেষদিকে রীতিমতো ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন। এক চার আর দুই ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রান করেছেন তিনি। তাতে দুইশ ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।