আরও ১ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকল বাংলাদেশে

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে আবারও রোহিঙ্গাদের অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটছে। স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গিয়ে নাফ নদে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। তবে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের মতে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ জন করে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ পর্যন্ত নতুন করে ১ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। এ
অবস্থায় নতুন করে আশ্রয় নেওয়া ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার আবাসনের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
এই চিঠির সত্যতা স্বীকার করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থল করে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ইউএনএইচসিআরের চিঠি পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।
প্রতিদিন কত জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন গড়ে ৩০/৪০ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য আছে। তবে এ সংখ্যাটি কখনই শতাধিক নয়। জাতিসংঘের চিঠিতে উল্লেখ করা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে আরো ২ হাজার রোহিঙ্গা এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এত বড় পরিসরে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, নতুন আশ্রয়ন প্রকল্প রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরও কঠিন করে তুলবে। কারণ এটি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে উত্সাহিত করবে।
সরকারি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। নতুন এ আগমনসহ বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৩ লাখ।
এ ব্যাপারে গতকাল বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন একান্তই জীবন বিপন্ন না হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে না আসে সে ব্যাপারে বিজিবি প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবনযাপনের মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, সেটা বলে মোটিভেশনের মাধ্যমে তাদেরকে অনুপ্রবেশ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরাকান আর্মির নির্যাতন থেকে বাঁচতে অনুপ্রবেশ:
নাফ নদ দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বলছেন, গত বছরের জুন-জুলাই মাসের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বেড়ে যায়। তারা দাবি করেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) নির্যাতন থেকে বাঁচতেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। রাখাইনে তারা (আরাকান আর্মি) হত্যাকান্ড, গুম ও নির্যাতন চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করে নির্যাতন চালাচ্ছে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তাদের শ্রমিক হিসেবে কাজে বাধ্য করছে এবং বাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারত থেকে আসা রাখাইন (মগ) জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করছে। এই কারণেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অনেক রোহিঙ্গা নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিহত হয়েছেন।