ট্রেন চলে না বিশ্বের যেসব দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০১ PM

বিশ্বে প্রথম রেল আবিষ্কার হয় ১৮২৫ সালে। এরপর তা একে একে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আবিষ্কারের ১০০ বছর হয়ে গেলেও বিশ্বের এমন কয়েকটি দেশ আছে যারা রেল যোগাযোগের বাইরেই রয়ে গেছে। আয়তনে ছোট, পার্বত, দ্বীপ বা মরুময় এলাকার আধিক্যের কারণে এ সব দেশে রেল যোগাযোগ চালু করা প্রায় অসম্ভব কিংবা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। অবশ্য রেলপথের ঘাটতি এরা পুষিয়ে দিয়েছে সড়ক, নৌ কিংবা বিমানপথের মাধ্যমে। এবার তাহলে চলুন পরিচিত হওয়া যাক ট্রেন চলে না এমন কিছু দেশের সঙ্গে।

ভুটান
শুরুটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটান দিয়েই করি। আয়তনে খুব বড় নয় ভুটান, ৩৮ হাজার ৩৯৪ বর্গকিলোমিটার। পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের দেশটির বেশির ভাগ অংশ জুড়েই উঁচু সব পর্বত এবং অসমতল ভূমি। এ সবকিছু মিলিয়ে এখানে রেল যোগাযোগ স্থাপন একরকম অসম্ভবই। তাই দেশটিতে যাতায়াতে বড় ভরসা সড়ক পথ। এমনকি দুরারোহ পার্বত্য এলাকাকেও চমৎকার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগের আওতায় নিয়ে এসেছে তারা।

ভুটানে চারটি বিমানবন্দরও আছে। এর মধ্যে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাহায্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হয়। তবে পারো বিমানবন্দরে নামাটা মোটেই সহজ কাজ নয়। পৃথিবীর ৫০ জন প্রশিক্ষিত পাইলটেরই কেবল এখানে ওঠা-নামার অনুমোদন আছে।

মালদ্বীপ
পর্যটকদের খুব পছন্দের গন্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগরের প্রায় ১২০০ প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা দেশটির আয়তন মোটে ২৯৮ বর্গকিলোমিটার। একে তো একেবারেই ছোট দেশ, তারপর আবার জলের রাজ্যে ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা—এ সবকিছু মিলিয়ে মালদ্বীপে রেললাইন বসানো বা ট্রেন চালানোটা খুব কঠিন। এক দ্বীপের সঙ্গে আরেক দ্বীপে যোগাযোগের মূল মাধ্যম তাই এখানে নৌযান। এ ছাড়া সি প্লেনও ব্যবহার করা হয়। এদিকে ভিনদেশি পর্যটকেরা সহজেই দেশটিতে চলে আসতে পারেন উড়োজাহাজে চেপে।

অ্যান্ডোরা
৪৬৮ বর্গকিলোমিটারের দেশটির অবস্থান ইউরোপে। গোটা দেশটিই পর্বতময়। ফ্রান্স আর স্পেনের মাঝখানে অবস্থিত অ্যান্ডোরাকে ঘিরে আছে পিরেনিজ পর্বতমালা। এখানে প্রায় ৩ হাজার মিটার উচ্চতার চূড়াও আছে। সবকিছু মিলিয়ে তাই এই এলাকায় রেললাইন স্থাপন করা মোটেই সহজ নয়। পার্বত্য এলাকার কারণে উড়োজাহাজ চালানোও সহজ নয় এখানে। তাই ইউরোপের এই দেশে রেলপথের পাশাপাশি কোনো বিমানবন্দরও নেই। 

যেসব কারণে বিমানবন্দর নেই এই ৫ দেশেযেসব কারণে বিমানবন্দর নেই এই ৫ দেশে
তাই বলে অ্যান্ডোরার বাসিন্দাদের সমস্যায় পড়তে হয় না। বার্সেলোনা, লেরিদা কিংবা জিরোনার মতো শহরগুলো অ্যান্ডোরার মোটামুটি ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে। বাসে বা গাড়িতে চেপে সেখানে গিয়ে ট্রেনে ধরতে পারেন ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়ার জন্য। তেমনি এ সব শহর থেকে উড়োজাহাজও ধরা যায়।

সাইপ্রাস
ইউরোপের দেশটির আয়তন ৯ হাজার ২৫১ বর্গকিলোমিটার। ১৯০৫ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত দেশটিতে একটি রেলপথ চালু ছিল। অর্থনৈতিক কারণে এটি পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই রেলপথের একটি বাড়তি অংশ সংযোজন করে সাইপ্রাস মাইন করপোরেশন। কিন্তু ১৯৭৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় এটিও। দেশটির ছোট আয়তন, পার্বত্য এলাকা এবং এমন ভূ-প্রকৃতির এলাকায় রেলপথ বসানোর জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন এর ঘাটতি—সব মিলিয়ে দেশটিতে রেলপথ নেই। তবে সাইপ্রাসে বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর আছে। নৌপথও এখানকার মানুষদের যোগাযোগে বড় ভূমিকা রাখে।

লিবিয়া
লিবিয়াতে রেলগাড়ি না চলাটা বিস্ময়করই। কারণ বিশালাকার এই দেশটির আয়তন ১৭ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪০ বর্গকিলোমিটার। একসময় দেশটিতে রেলপথ ছিল। তব গৃহযুদ্ধের সময় এসব রেললাইন তুলে ফেলা হয়। ২০০৮ সালে নতুন করে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হলেও নতুন গৃহযুদ্ধে এটাও থমকে যায়। মূলত অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কারণেই এখান দেশটিতে রেল যোগাযোগ নেই। সড়ক ও বিমানপথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাতায়াত করেন আফ্রিকার এ দেশটির বাসিন্দারা।

আইসল্যান্ড
এক লাখ ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটির জনসংখ্যা কেবল ৩ লাখ ৮২ হাজার। অবশ্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটির বৈরী, শীতল পরিবেশের কথা বিবেচনা করলে এটিও কম নয়। দেশটিতে জনসাধারণের জন্য কখনোই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়নি। তবে দেশটির ইতিহাসে তিনবার শিল্প কারখানার প্রয়োজনে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে মালামাল বহনের জন্য রেলপথ বসানো হয়, ট্রেনও চলে। তবে এর কোনোটিই সচল নেই এখন আর।

অটোমোবাইল শিল্পের দিক থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তুলনামূলকভাবে কম জনসংখ্যা এবং বৈরী আবহাওয়াই এখানে ট্রেন না চলার মূল কারণ।

সোমালিয়া
আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ সোমালিয়াতে গেলেও ট্রেনে চড়তে পারবেন না। কারণ ছয় লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৭ বর্গকিলোমিটারের দেশটিতে রেল যোগাযোগই নেই। ইতালির অধীনে থাকার সময় ১৯১০ সালে ইতালিয়ান সোমালিল্যান্ডে রেল ট্র্যাক বসানো হয়। ট্রেনও চলতে এই লাইনে। তবে ইতালিয়ান সোমালিল্যান্ডে ১৯৪০-র দশকে ব্রিটিশ সামরিক অভিযানের সময় রেললাইনগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলায় এবং দারিদ্র্যের কারণে রেলপথ তো নেইই, এমনকি এখানে সড়ক যোগাযোগও খুব একটা ভালো নয়।

ওপরে বর্ণনা দেওয়া দেশগুলো ছাড়াও পাপুয়া নিউগিনি, রুয়ান্ডা, ইয়েমেন, মাল্টা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোসহ পৃথিবীর আরও কিছু দেশে রেলপথ নেই, কিংবা আগে থাকলেও পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

সূত্র: টেলিগ্রাফ, উইকিপিডিয়া, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইকনমিক টাইমস