পূর্ত ভবনে দেখতে পেলাম দৃষ্টিনন্দন নাগলিঙ্গম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০০ PM

গণপূর্ত  ভবনের প্রবেশ মুখে দৃষ্টিনন্দন নাগলিঙ্গম ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ হবে আপনিও

গণপূর্তের প্রধান ফটক দিয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে নাকে এলো এক দারুণ সুবাস! এখানে তো দেশের লাখপতিদের আনাগোনা তাই ভাবলাম কোনো ফারফিউমও হতে পারে। কিন্তু না একটু সামনে এগুতেই চোখে পড়ল এ আঙ্গিনার সবচেয়ে বড় বৃক্ষ নাগলিঙ্গমের দিকে । দ্রুত এগিয়ে গেলাম গাছটির কাছে আর কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। চারপাশে ঘুরে দেখলাম। বেশ ভালো লাগলো। চলুন এবার জেনে এই  বৃক্ষ ও ফুলের আদি-অন্ত্য:

Sudeepto_cj_2024-(1)

ফুল ফুটার সময় নাগলিঙ্গমের সুবাসের বেশ খ্যাতি রয়েছে। ফুলের ঘ্রাণ অনেকটা শাপলা, পদ্ম ও গোলাপের সংমিশ্রণের মতো। তবে ফলে বেশ বাজে গন্ধ। ফুলের আকৃতি অনেকটা ফণাতোলা সাপের মতো দেখা যায় তাই হয়তো এর নামকরণ নাগলিঙ্গম হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

বিরল প্রজাতির এ উদ্ভিদের রয়েছে বেশকিছু ঔষধি গুণও। এই গাছের বাকল, ফুল ও পাতার নির্যাস দিয়ে তৈরি করা যায় এন্টিসেপটিক, এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিবায়োটিক। ম্যালেরিয়া উপশমেও এর পাতা ব্যবহায় হয় দক্ষিণ আমেরিকাতে।

নাগলিঙ্গম একটি দুর্লভ বৃক্ষ। এর ফুল বেশ আকর্ষণীয়, মনোরম। অদ্ভুত সুন্দর এ ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। ধারণা করা হয়, এ কারণেই এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম। সাধারণত বেশিরভাগ উদ্ভিদের ফুল শাখায় ফুটলেও নাগলিঙ্গমের ফুল ফোটে গাছের মধ্য গুঁড়িতে। গুঁড়ি ফুঁড়ে বের হয় ছড়া। তারপর শত শত ফুল। ফুলভর্তি গাছ দেখলে মনে হবে কেউ বুঝি গাছের কাণ্ড ছিদ্র করে ফুলগুলোকে গেঁথে দিয়েছেন।

Sudeepto_cj_2024-(4)

নাগলিঙ্গমের ফুল গাঢ় গোলাপি, সঙ্গে হালকা হলুদ রঙের মিশ্রণ। পাপড়ি ছয়টি, গোলাকার কুল্লি পাকানো। যেন ফণা তোলা সাপ। ফুলগুলো বেশ বড় বড়। এক কথায় দেখতে অসাধারণ।

গাছ এখন ফুলে-ফুলে পল্লবিত তীব্র ঘ্রাণের মাদকতা আপনাকে কাছে টানবেই

ফুলগুলো বেশ আকর্ষণীয়, চোখে পড়লেই পথচারীকে থমকে দাঁড়াতে হয়। ফুটবলের মতো জাম্বুরা আকৃতির ফলগুলো খয়েরি রঙের। এ গাছের বিশেষত্ব হচ্ছে, একই সময়ে ফল এবং ফুল শোভা পায়। নাগলিঙ্গম সৌরভের জন্যও সেরা। দিন-রাতের যে কোনো সময় নাগলিঙ্গম গাছের পাশ দিয়ে গেলে এর তীব্র ঘ্রাণের মাদকতা আপনাকে কাছে টানবেই। ফুলের সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ।

Sudeepto_cj_2024-(6)

দ্বিজেন শর্মা তাঁর 'শ্যামলী নিসর্গ' বইয়ে লিখেছেন, 'আপনি (এ ফুলের) বর্ণে, গন্ধে, বিন্যাসে অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। এমন আশ্চর্য ভোরের একটি মনোহর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেক দিন আপনার মনে থাকবে।' নাগলিঙ্গম ফুল সারা বছর ফুটলেও গ্রীষ্ফ্মকাল হচ্ছে উপযুক্ত সময়। শীত এবং শরৎকালে গাছে অপেক্ষাকৃত কম ফুল ফোটে। নাগলিঙ্গমের টুকটুকে লাল ফুলগুলো খুবই সুন্দর, সবার দৃষ্টি কাড়ে।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, নাগলিঙ্গমের বৈজ্ঞানিক নাম 'কুরুপিটা গুইয়ানেন্সিস' (Couroupita Guianensis) এবং তা লিসিসিবেসি (Lecychibaceac) পরিবারভুক্ত। প্রায় তিন হাজার বছর আগে আমাজান জঙ্গলে প্রথমে এই গাছের সন্ধান মেলে। গাছগুলো 'ক্যানন বল' (কামানের গোলা) নামেও পরিচিতি। ভারতে নাগলিঙ্গমকে 'শিব কামান' নামে ডাকা হয়।

Sudeepto_cj_2024-(3)

এ গাছের পাতা সবুজ। প্রতিটি ফুলে পাঁচটি করে পাপড়ি থাকে। ফুলের রং হয় কমলা অথবা টকটকে লাল।

ফুলের মাঝখানে একটি পরাগ থাকে যা দেখতে ফণা তোলা সাপের মতো। সারাবছরই ফুল ফুটলেও সাধারণত চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে বেশি দেখা যায়। গাছের ফুল ও রস চর্মসহ নানা রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়।

Sudeepto_cj_2024-(2)

ফলগুলো গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ফুল ও ফলের নির্যাস থেকে দামি সুগন্ধি তৈরি করা হয়। একটি ফলে ২০০ থেকে ৩০০ বীজ থাকে। এ গাছের রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধি গুণ। গাছের ছাল ও পাতার নির্যাস চর্মরোগ এবং ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশে অনেকেই এই গাছকে নাগেশ্বর বলে জানেন। তবে নাগেশ্বর নাগলিঙ্গম থেকে একটু আলাদা।

Sudeepto_cj_2024-(7)

বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম বেশ দুর্লভ। ঢাকায় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ছাড়াও রমনা উদ্যান, কার্জন হল, বলধা গার্ডেন, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট ও হবিগঞ্জে এ গাছ রয়েছে বলে জানা গেছে।